গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে এক নারীকে তার সাবেক স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অপবাদ দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ওই নারীকে মারধর ও মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি মোনারুল ইসলামসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুর ২টার দিকে পালিয়ে থাকা মোনারুলকে (৩৫) উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রধান আসামি মোনারুল ইসলাম ওই গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে এবং এই নারীর সাবেক স্বামী।
এছাড়া একই ঘটনায় গতকাল সোমবার বিকেলে শাহজাহান আলী (৪৮), আব্দুর ছাত্তার (৫৫) ও চামেলি বেগম (৪০) নামের আরো তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এর আগে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার ৩৫ বছর বয়সী ওই নারীর নাম ছকিনা বেগম। তিনি একই এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ, মামলার এজাহার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই নারী তার দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। অসুস্থজনিত কারণে প্রায় ১৫ দিন আগে গ্রামের বাড়িতে আসেন ওই নারী।
দীর্ঘদিন থেকে প্রতিবেশী আইনুল মিয়া, হারুন মিয়া ও জেলবর মিয়াসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে বসতভিটা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল এই নারীর। এর আগেও তাকে একাধিকবার বাড়ি থেকে তাড়ানোর পায়তারা করেছিল তারা। সর্বশেষ গত রোববার রাতে পরিকল্পিতভাবে নারীর সাবেক স্বামী মোনারুল ইসলামকে তার শোয়ার ঘরে ঢুকিয়ে দেয় এবং মোনারুল ওই নারীর খাটের নিচে লুকিয়ে ছিলেন। পরে সুযোগ বুঝে মোনারুল ইসলাম ওই নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন এগিয়ে আসায় মোনারুল পালানোর চেষ্টা করলেও ওই নারী তাকে জাপটে ধরে রাখেন। ফলে মোনারুল আটকা পড়ে। কিন্তু এ ঘটনার পর পরিকল্পনাকারী প্রতিপক্ষরা ওই নারীকে ঘরে সাবেক স্বামীকে ঢোকানোর অপবাদ দিয়ে তার বাড়ির সামনের একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারপিট করে এবং মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় পরদিন সোমবার ছকিনা বেগম নিজেই বাদী হয়ে মোনারুলকে প্রধান আসামি করে সাতজনের নামে গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গতকাল তিনজন এবং আজ প্রধান আসামি মোনারুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলম শাহ বলেন, স্থানীয়দের খবরে ওই রাতেই নারীকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরদিন ভুক্তভোগী নারী নিজে বাদী হয়ে সাতজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ মামলার প্রধান আসামি মোনারুল ইসলামসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।