উৎপাদন বাড়াতে গম ও ভুট্টা চাষিদের জন্য এক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিল কীভাবে পরিচালিত হবে, কারা ঋণ পাবেন, কী শর্ত থাকবে সেসব বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) নীতিমালা উল্লেখ করে সার্কুলারটি জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কৃষি খাতকে এগিয়ে নিতে গম ও ভুট্টা চাষে এ স্কিম চালু করা হয়েছে। বর্তমান সংকটের কথা মাথায় রেখে সরাসরি কৃষকদের মাঝে ঋণ বিতরণ করবে ব্যাংকগুলো। এ তহবিলের আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া অর্থের বিপরীতে ব্যাংকগুলো দশমিক ৫ শতাংশ সুদ পরিশোধ করবে। কৃষকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদ আদায় করতে পারবে। চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ৩ বছরের এ স্কিমের মেয়াদ শুরু হবে।
সার্কুলারে বলা হয়, স্কিমের নাম হবে গম ও ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম। স্কিমের আওতায় তহবিলের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে এ অর্থ সরবরাহ করা হবে। স্কিমের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রয়োজনে স্কিমের মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে।
এ স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহকে নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সরাসরি কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। গম ও ভুট্টা চাষের উপযোগী অঞ্চলগুলোতে এ স্কিমের আওতায় ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালায় উল্লেখিত গম ও ভুট্টা চাষের ঋণ নিয়মাচার অনুযায়ী ব্যাংকগুলো কৃষকদের অনুকূলে ঋণ বিতরণ করতে পারবে।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী ভূমিহীন কৃষক (যাদের জমির পরিমাণ দশমিক ৪৯৪ একরের কম), ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক (যাদের জমির পরিমাণ দশমিক ৪৯৪ একর থেকে ২ দশমিক ৪৭ একর) এবং বর্গাচাষিদের এ স্কিমের আওতায় এককভাবে জামানতবিহীন (শুধুমাত্র ফসল দায়বন্ধনের বিপরীতে) সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া যাবে।
এ ছাড়া, অন্যান্য কৃষকের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাইপূর্বক ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের পরিমাণ নির্ধারণপূর্বক এ স্কিমের আওতায় বিতরণ করতে পারবে। এ স্কিমের আওতায় গৃহীত ঋণ দ্বারা কোনোভাবেই পুরাতন ঋণ সমন্বয় করা যাবে না।
সিআইবি রিপোর্ট অনুযায়ী কোনো কৃষক খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হলে এ স্কিমের আওতায় ঋণ পাবেন না।
এ স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্ধারিত দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। কৃষক পর্যায়ে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ (সরল হারে)। সুদও মুনাফা হার সকল গ্রাহকের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হবে। কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী ফসল উৎপাদনের পঞ্জিকা ও ঋণ পরিশোধ সূচিতে উল্লিখিত গম ও ভুট্টা চাষের উৎপাদন পঞ্জিকা ও পরিশোধ সূচি অনুযায়ী কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করা ঋণের মেয়াদ নির্ধারিত হবে।
কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ শুরু করার পর অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহকে মাসিক ভিত্তিতে পুনঃঅর্থায়নের অর্থ প্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন প্রাপ্তির লক্ষ্যে নিম্নোক্ত প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্রসহ পরিচালক, কৃষি ঋণ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়ের নিকট পুনঃঅর্থায়নের জন্য আবেদন করতে হবে।
ব্যাংকের অনুকূলে ছাড়কৃত অর্থের নির্ধারিত মেয়াদপূর্তির মধ্যেই সুদ বা মুনাফাসহ গৃহীত আসলের সমুদয় অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করতে হবে। কৃষক পর্যায়ে বিতরণকৃত ঋণ আদায়ের সব দায়-দায়িত্ব ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত থাকবে।
গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের বিপরীতে ৪ শতাংশের বেশি সুদ আদায় করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সে পরিমাণ অর্থের ওপর নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত ২ শতাংশ হারে সুদ আদায় করা হবে।