কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি ধলঘাট এলাকায় নির্মণাধীন মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে দুই থেকে তিন বিলিয়ন ডলার যুক্ত হবে। তাছাড়া সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন খরচ ১০ থেকে ২০ ভাগ কমে আসবে।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার সিম্বল হয়ে থাকবে। আর দেশের অর্থনীতিতে দুই থেকে তিন বিলিয়ন ডলার যোগ হবে। বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন খরচও কমে আসবে। এক কথায় অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত সূচিত হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে ১ হাজার ৩১ একর জায়গার নির্মাণ করা হচ্ছে এই বন্দরটি। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে ৮ হাজার ২০০ টিইইউএস ক্ষমতাসম্পন্ন কন্টেইনার বহনকারী জাহাজ নোঙর করতে পারবে।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর দৃশ্যমান হয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৬ সালে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে। এখানে বড় ধরনের ফিডার ভেসেল আসবে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের জায়গায় নিয়ে গেছেন। শনিবার (১১ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন এবং মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, চট্টগ্রাম বন্দর হবে অর্থনীতির লাইফ লাইন। গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে পণ্য নিয়ে সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার বন্দরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আর অপেক্ষায় থাকতে হবে না। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় একটি পণ্যের চালান পাঠাতে সময় লাগে ৪৫ দিন। মাতারবাড়ি বন্দর চালু হলে মাত্র ২৩ দিনেই সরাসরি নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদ হোসেন জানান, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পাশে ২ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পাশে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
তিনি জানান, দেশের প্রথম ও একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মাতারবাড়ি টার্মিনাল বাস্তবায়িত হলে ১৬ মিটার বা ততোধিক গভীরতাসম্পন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ গমনাগমন করতে সক্ষম হবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতাসম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। এছাড়া অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পাশে ২ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পাশে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণকাজও শেষ হয়েছে। বর্তমানে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার জেটি ও ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ এবং কন্টেইনার ইয়ার্ডসহ বন্দর সুবিধা নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক শূন্য দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক ১ মিলিয়ন টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আনুমানিক ২ দশমিক ২ হতে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন টিইইউস কন্টেইনার কার্গো হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের সড়ক ও জনপথ অংশে ২৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে মাতারবাড়ি বন্দরের সঙ্গে ন্যাশনাল হাইওয়ের সংযোগ স্থাপন করার কাজও চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে সমুদ্রবন্দর নির্মাণে ব্যয় হবে ৮ হাজার ৯৫৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বন্দর নির্মাণে জাপানি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা ঋণ সহায়তা দেবে ৬ হাজার ৭৪২ কোটি ৫৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। বাকি ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা দেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)।
এছাড়া বন্দর এলাকায় সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সড়ক নির্মাণে জাইকা ঋণ সহায়তা দেবে ৬ হাজার ১৫০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। বাকি ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ সড়ক ও জনপথের (সওজ) ফান্ড থেকে ব্যয় করা হবে। বন্দর ও সড়ক নির্মাণে জাপান সরকার মোট ঋণ সহায়তা দেবে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প ২০২০ সালের ১০ মার্চ একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পে মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় সড়ক নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।