নিজেদের শক্তির জানান দিতে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে আহ্বান জানিয়েছেন এর জবাব দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কাদেরের আহ্বানের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘আসেন মাঠে। গদি ছেড়ে দিয়ে আসেন। পুলিশ বাদ দিয়ে আসেন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। দেখেন কার কত শক্তি।’
মঙ্গলবার (১৩ জুন) বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগে সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে পদযাত্রা শুরু হওয়ার আগে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন।
লোডশেডিং ও বিদ্যুৎখাতে দুর্নীতি-অনিয়মের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।
ওবায়দুল কাদের সোমবার রাজধানীতে যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের কয়েকটি ওয়ার্ডের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে বলেছিলেন, ’ইলেকশনে আসেন না, দেখি পাবলিক কারে ভোট দেয়। নির্বাচনে এলে বুঝব কারা জনপ্রিয়। নির্বাচনে নিজেদের শক্তি যাচাই করে দেখুন।’
ওই বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট করতে হলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এখনো সময় আছে, মানে মানে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। না হলে পালাবার পথও পাবেন না। এখন আবার আমেরিকাও পথ বন্ধ করে দিয়েছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক আর হবে না কোনোদিন- এসব বলায় আপনাদের খুব মজা লাগে। কিন্তু এই দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছেন। ১১ জনকে গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছেন। জামায়াত-জাতীয় পার্টির সঙ্গে হাত মিলিয়ে আন্দোলন করেছেন।’
জনগণের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়কের দাবি মেনে নিয়ে তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন বলে জানান ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আপনারা কী করলেন। কারসাজি করে ক্ষমতায় এসে আদালতকে ব্যবহার করে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করলেন।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে তার নাম কালো অক্ষরে লেখা থাকবে। তিনিই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার রায় দিয়েছিলেন। তবে বলেছিলেন, আরও দুটি নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পর যখন পূর্ণাঙ্গ রায় লিখলেন, সেখানে আর ওই দুইবারের নির্বাচনের কথা রাখেননি।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণের আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম। বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন, মীর সরফত আলী সপু, হাসান জাফির তুহিন, শিরিন সুলতানা প্রমুখ।
এ পদযাত্রাটি গোপীবাগ সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সামনে থেকে শুরু হয়ে রায়সাহেব বাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়।
একই দাবিতে বেলা ৩টায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের সামনেও পদযাত্রার পূর্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
পদযাত্রাটি মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে নাবিস্কো, সাতরাস্তা মোড়, হাতিরঝিল মোড় ও এফডিসি হয়ে হোটেল সোনারগাঁও সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। এছাড়া ঢাকার বাইরে রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, গাজীপুর, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জে পদযাত্রা হয়েছে।
ঢাকা উত্তরের কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একটি হারিকেন দেখিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই হারিকেন শেখ হাসিনা সরকারের হাতে ধরিয়ে দিতে হবে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নির্ভরশীলতা জনগণের ওপর নেই, তাদের নির্ভরশীলতা পুলিশ, র্যাব ও আনসারের একাংশের ওপর। এই একাংশ এই অবৈধ অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বেআইনি কাজ করছেন, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ও সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। এই একাংশের কাছে অনুরোধ এই পথ থেকে সরে আসেন, দেশের জনগণ জেগেছে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জনগণের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে শামিল হন। আপনারা যারা পুলিশ-র্যাব-আনসারে আছেন, সরকারি কর্মকর্তা আছেন আপনারা আপনাদের সাংবিধানিক দায়িত্বে নির্বিঘ্নে পালন করতে পারবেন। আপনারা জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েন না, জনগণের পাশে থাকেন।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘আগামী দিনগুলো সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে। এই সরকারের সঙ্গে জনগণ নেই। তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা চাইবে সহিংসতা করতে। তারা চাইবে আমাদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা জয়ের শেষ ভাগ এসে পৌঁছেছি। সহিংসতা কে করে, যার সঙ্গে জনগণের সমর্থন নাই তারা। কোটি কোটি জনতা বিএনপির পক্ষে আছে, আমরা কেন সহিংসতা করব? সরকারকে বলব ওই পথে যাইয়েন না। সুবোধবালকের মতো গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, আপনাদের জন্য ভালো হবে, দেশের জন্য ভালো হবে।