‘কী হবে ২৮ অক্টোবর’ সবখানে এখন একই প্রশ্ন। পাড়া-মহল্লার হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে গণপরিবহনে আলোচনা একই বিষয়ে। একই দিন (২৮ অক্টোবর শনিবার) রাজধানীতে তিনটি বৃহৎ দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে জনমনে। এজন্য সবখানে ২৮ অক্টোবর ঘিরেই আলোচনার ঝড় উঠছে।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর মুগদা এলাকার চায়ের দোকানে কয়েকজন মিলে করছিলেন দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ নিয়ে কথা প্রসঙ্গে একজন বলেন, ‘আমাদের দেশের রাজনীতি মানেই গণ্ডগোল। বড় দুই দলে একই দিনে সমাবেশ করতে হবে কেন? আলাদা আলাদা দিন করলে কী হয়। তাইলে আমাগোর ভোগান্তি কম হয়। হ্যারায় হ্যারায় গণ্ডগোল করে, আমাদের পাবলিকের ভোগান্তি হয়।’
আরেকজন বলেন, ‘জানি না কাইলে কী হইবো। বিএনপি আওয়ামী লীগের সমাবেশ, তার ওপর জামাতও নামবে কালকে। জামাত নামলেই তো পুলিশের সাথে ঝামেলা হয়। যদি পুলিশ তাগোরে অনুমতি না দেয় তয় নিশ্চিত ঝামেলা হইবো। জামাত-শিবির যখন নামে প্রস্তুতি নিয়াই নামে।’
এদিকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কমতি নেই রিকশাওয়ালাদেরও। কমলাপুর থেকে মতিঝিল যাওয়ার সময় রিকশাচালক মজনু এই প্রতিবেদকের সাথে কথা প্রসঙ্গে বলেন, ‘সবাই কইতাছে কাইলকা একটা কিছু গণ্ডগোল হবে। ঢাকার বাহির থেইকা নাকি অনেক মানুষ আসতাছে। ঢাকা শহরে একটু কিছু হইলেই তো রাস্তা বন্ধ হইয়া যায়। জিনিসপত্রের দাম বাইড়া যায়। দেখা যাক কাইলকা কী হয়।’
আলোচনা চলছে লেগুনাতেও। মুগদা বিশ্বরোড থেকে মতিঝিল যাওয়ার সময় একজন বলেন, ‘কাইলকে মতিঝিলেও নাকি সমাবেশ আছে। কাইলকে কি লেগুনা চলবো? না চললে তো আমাদেরকে হেঁটেই যাতায়াত করতে হবে। কে যানে পরিস্থিতি কোন দিকে যাইতেছে।’
এদিকে শনিবার সমাবেশকে কেন্দ্র করে আজকে থেকেই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। ঢাকার বাইরে থেকে যেসব নেতাকর্মী এসেছেন অনেকেই থাকার জায়গা পাচ্ছেন না। সে কারণে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশেপাশে এসে অনেকে ভিড় জমাচ্ছেন। শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলেও এখন পুলিশি অনুমতি পায়নি দলটি। এখানে কেউ জমায়েত হয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি যেন তৈরি না করতে পারে সেজন্য নেতাকর্মীদের কার্যালয়ের সামনে থেকে সরে যাওয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
অপরদিকে শনিবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য ইতোমধ্যে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। বাঁশ ও কাঠের মাচান দিয়ে শক্ত-পোক্ত করে তৈরি করা হচ্ছে সমাবেশ মঞ্চ। রাতের মধ্যে মঞ্চ তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে এই সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগম ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগ।
বৃহৎ দুই দল ও জামায়াতের কর্মসূচিকে ঘিড়ে রাজধানীতে মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। ঢাকার প্রবেশ মুখগুলোতে চলছে তল্লাশি। শুক্রবার সকালেই গাবতলীর সেতুর দুই প্রান্তেই বসানো হয়েছে পুলিশের তল্লাশি চৌকি। পুলিশি তল্লাশির কারণে সেতুর গাড়ি চলাচলে ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিন বিকেলেও তল্লাশি দেখা গেছে গাবতলী সেতু এলাকায়। তল্লাশির পরেই রাজধানীতে ঢুকতে পারছেন সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তল্লাশির কারণে পুরো সেতুতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গাবতলী থেকে চলমান গাড়ির দীর্ঘ সারি পৌঁছেছে বলিয়াপুর পর্যন্ত। গাবতলী পর্বত সিনেমা হল প্রান্তে অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য তল্লাশির দায়িত্বে আছে।