গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার একের পর এক আইন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার (১৯মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) একাংশের বার্ষিক কাউন্সিলে তিনি এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যেসব আইন করা হচ্ছে, প্রত্যেকটি আইন বিশেষ করে সংবাদ মাধ্যমের জন্য যে নীতিমালা তারা বলে-মিডিয়া নীতিমালা। এর প্রত্যেকটি আইন, প্রত্যেকটি নীতিমালা করা হচ্ছে সংবাদ বা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আরেকটা সমস্যা হচ্ছে যে কথাটা আপনারা অনেকে বলেছেন; দেশে মিডিয়া হাউজগুলোর মালিক হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা এবং তাদের এটা ছাড়া তারা টিকতে পারে না। ’ আমাদের সমাজে একটা স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। সেই ক্ষতটা হচ্ছে বিভাজন। আজকে দেখুন আপনারা এই সাংবাদিক ইউনিয়ন দুই ভাগ, আপনাদের সংবাদ কর্মীরা দুই ভাগ। অর্থাৎ একটা জায়গাও বিভক্তি ছাড়া নেই। চিকিৎসকরা দুই ভাগ.. এই প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা হয়ে গেছে। ’
বিভাজন ও বিভক্তির জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘যারা ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী তারা সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সবসময় বিভাজন সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ ক্ষমতায় থাকতে হলে ভাগ করে ফেলো…। ’‘আওয়ামী লীগ গত এক যুগে এদেশেকে অন্তঃসার শূণ্য করে দিয়েছে, ফোকলা করে দিয়েছে। আমি যে কথা বলি বাংলাদেশের একটা নিজস্ব আত্মা আছে, সোল; সেই সোলটাকে তারা ধবংস করে দিয়েছে। আপনি দেখবেন আমাদের সাধারণ মানুষ যখন গ্রামে থাকে তখন একটা চায়ের ঘুপরী ঘরের সামনে একটা বেঞ্চে থাকে। সেখানে বসে তারা এক কাপ চা খেয়ে রাজনীতির কথা বলেন, সেখানে তারা বিভিন্ন ভালো-মন্দের কথা বলেন। এখন সেই ঘুপরী ঘরে দুইটা বেঞ্চে থাকবে- একটা আওয়ামী লীগের আরেকটা বিএনপির। এটাই বাস্তবতা। ’
তিনি বলেন, এদেরকে (আওয়ামী লীগ) সরাতে হবে। এদেরকে না সরিয়ে এখানে কোনো কিছু করা যাবে না। এদেরকে সরাতে হলে যে জিনিসটা দরকার তা হচ্ছে আমাদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করতে হবে। আমি সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করব আপনাদের মধ্যে একটা ঐক্য তৈরি করেন, এটা প্রয়োজন। অন্যান্য পেশাজীবীদের সঙ্গেও ঐক্য তৈরি করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জাতীয়ভাবে চেষ্টা করছি, জনগণের মধ্যে ঐক্য তৈরি করতে। সব রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে একটা ঐক্য তৈরি করতে। আমি একথা বলি না যে, ইউনাইটেড জোট হবে, ইউনাইটেড প্ল্যাটফর্ম …। কিন্তু আমরা যেন একই সঙ্গে এই সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি এবং তাদেরকে যেন পরাজিত করতে পারি সেই বিষয়টা নিয়ে আমরা কাজ করছি। ’
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘আজকে প্রত্যেকটি জেলা বলেন, এমন কোনো জেলা নেই যেখানে সরকারের মন্ত্রীরা, প্রভাবশালীরা, আওয়ামী লীগের নেতারা সংবাদ কর্মীদের নির্যাতন করে, দুর্নীতির খবর যাতে না ছাপে সেজন্য হুমকি দেয়। এমন এক অবস্থা তৈরি হয়েছে। যে আওয়ামী লীগ নেতা স্যান্ডেল পরতে পারতো না তার পাঁচটা বাড়ি, নতুন গাড়ি হয়েছে। আসলে আওয়ামী লীগ এই দেশে আর কোনো কিছু বাকি রাখেনি।
বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে এবং রাশেদুল হক ও শফিউল আলম দোলনের সঞ্চালনায় বার্ষিক সম্মেলনে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশসের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, এমএ আজিজ, কামাল উদ্দিন সবুজ, বাকের হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ইলিয়াস হোসেন ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বক্তব্য রাখেন।
এই বার্ষিক কাউন্সিলে সারা দেশ থেকে দুই শতাধিক কাউন্সিলর অংশ নেন। এছাড়া ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিউজে) একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, রাজশাহীর সরদার আবদুর রহমান, খুলনার আনিসুজ্জামান, যশোরের এম আইয়ুব, ময়মনসিংহের এম আইয়ুব আলী, গাজীপুরের এইচএম দেলোয়ার হোসেন, বগুড়ার মির্জা সেলিম রেজা, কুমিল্লার রমিজ খান, দিনাজপুরের মাহফিজুল ইসলাম রিপন, কুষ্টিয়ার আবদুর রাজ্জাক বাচচু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।