প্রস্তাবিত ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন’ নামে নতুন কোনো আইনের প্রয়োজন নেই বলে মনে করে নিউজপেপার ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-নোয়াব। রোববার এক বিবৃতিতে নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ ও সহ-সভাপতি এএসএম শহীদুল্লাহ খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এতে বলা হয়, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের সংবাদপত্র শিল্পের বিকাশে ‘নোয়াব’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। নোয়াবের ধারাবাহিক দাবির কারণে সরকার ২০১৪ সালে সংবাদপত্রকে ‘শিল্প’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু ‘শিল্প’ সম্পর্কিত প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা সংবাদপত্র পাচ্ছে না।
কোভিডের অভিঘাতের কারণে সংবাদপত্র শিল্প আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কোভিডকালে লকডাউনের সময় সরকারের কাছে বারবার আর্জি জানালেও অন্যান্য খাতের মতো সংবাদপত্র শিল্প কোনো সহায়তা পায়নি। ২০২০ সালে নিউজপ্রিন্টের আমদানি মূল্য টনপ্রতি ৫০০ ডলারের আশেপাশে থাকলেও এখন তা ১ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে ডিজিটাল বাস্তবতা ছাপা সংবাদপত্রকে পাঠকপ্রাপ্তি ও ব্যবসায়িক দিক থেকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। কিন্তু সংবাদপত্রের এই সংকটকালীন সময়ের মধ্যেই গত ২৮শে মার্চ জাতীয় সংসদে গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইন, ২০২২ উত্থাপন করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের জাতীয় ইতিহাস আর ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সংবাদপত্র আর সাংবাদিকতা যে আজকের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে তা হয়তো আগে থেকে কেউ ভাবতে পারেননি। অথচ পঞ্চাশ থেকে সত্তর দশকের স্বাধিকার আর স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্বাপর অবিস্মরণীয় ভূমিকা রয়েছে আমাদের সংবাদপত্রের। নব্বই দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এমনিতেই সাংবাদিকতা পেশা অন্য আর দশটি পেশার চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবাদকর্মীদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষেত্রে এক ধরনের চাপ তৈরি করেছে। এর ওপর প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন পাস হলে শিল্প হিসেবে সংবাদপত্র আরও বেশি রুগ্ণ হবে। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের জন্য তা হবে মর্যাদাহানিকর।
প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইনে দেনা-পাওনা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এক বা একাধিক বিভাগীয় এলাকার জন্য গণমাধ্যম আদালত স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। এ আদালতের একজন চেয়ারম্যান এবং দুইজন সদস্য থাকবেন। কর্মরত জেলা জজদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যান হবেন। দুই সদস্যের একজন হবেন গণমাধ্যম মালিক, আরেকজন গণমাধ্যমকর্মী। উল্লেখ্য যে, সংবাদকর্মীদের দেনা-পাওনা এবং যেকোনো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ‘শ্রম আদালত’ রয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির মাধ্যমে গঠিত ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল’ বাংলাদেশের সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ ও বাকস্বাধীনতা রক্ষার জন্য কাজ করে আসছে।
একইসঙ্গে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার মান বজায় রাখা ও সংশোধন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও সুরক্ষার উদ্দেশ্যেই সংস্থাটি কাজ করে থাকে। কাজেই প্রচলিত শিল্প আইন, বাংলাদেশ শ্রম আইন, প্রেস কাউন্সিল এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মাধ্যমেই সংবাদপত্রের সকল কার্যক্রম তদারকি করা সম্ভব। ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন’ নামে নতুন কোনো আইনের প্রয়োজনীয়তা নেই। নোয়াব মনে করে, প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা, শিল্প আইন এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই আইন পাস হলে স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্তসহ সংবাদপত্রের বিকাশকে সংকুচিত করবে।