দেশের ব্যাংকখাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ আদায়ে নানা পদক্ষেপ ও নীতিমালার কথা শোনা গেলেও বছরের পর বছর তা বেড়েই চলছে। এবার খেলাপি ঋণ আদায়ে মামলা তথা আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তিতে গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার (১২ মে) এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ে আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলায় বিবাদীর লিখিত জবাব দাখিলের পর ধারা ২২ অনুসারে আদালত কর্তৃক প্রতিটি মামলা পক্ষগণের নিকট মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পাঠানো হয়। মধ্যস্থতার মাধ্যমে কোনো মামলার নিষ্পত্তির আদেশ চূড়ান্ত মর্মে গণ্য হবে এবং ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে কোন আপিল বা রিভিশন দায়ের করা যাবে না মর্মেও ওই ধারায় উল্লেখ রয়েছে। উক্ত আইন অনুসারে আদালত কর্তৃক রায় বা আদেশ প্রদানের পূর্বে মামলার যেকোনো পর্যায়ে উভয় পক্ষ আদালতের অনুমতিক্রমে বিকল্প পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের ১৬/০৪/২০১৬ তারিখের পত্রের মাধ্যমে অনাদায়ী পাওনা আদায়সহ অন্যান্য যে কোনো বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে তফসিলি ব্যাংকসমূহকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সালিশ কেন্দ্রের (Bangladesh International Arbitration Centre) সহায়তা গ্রহণ এবং বিভিন্ন পক্ষের সাথে ব্যাংকের সম্পাদিত ঋণ চুক্তিসহ বিভিন্ন চুক্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়। এতদসত্ত্বেও, খেলাপি গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধে সদিচ্ছার অভাব, মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে ব্যাংকসমূহের ছাড় না দেওয়ার প্রবণতা, ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়া, মধ্যস্থতাকারীর পারিশ্রমিক নির্ধারণ ও পরিশোধে অনীহা/কালক্ষেপণ, পক্ষসমূহের মতভেদ দূর করতে মধ্যস্থতাকারী কর্তৃক যথাযথ ভূমিকা না রাখা ইত্যাদি নানাবিধ কারণে অর্থ ঋণ আদালত আইনের আওতায় দায়েরকৃত মামলাসমূহে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে সফলতার হার আশানুরূপ নয়। উল্লেখ্য, খেলাপি ঋণ আদায় ত্বরান্বিত করতে খেলাপি গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পূর্বেও মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, খেলাপি ঋণ আদায়ে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহারের লক্ষ্যে মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া অনুসরণে খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য জারিতব্য নোটিশে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা/সদিচ্ছাকে বিবেচনায় নিয়ে কেস টু কেস ভিত্তিতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা; ব্যাংকার ও গ্রাহক উভয়পক্ষের সম্মতিতে অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে তালিকাভুক্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ মধ্যস্থতাকারী অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আইনজীবী, অথবা অন্য যে কোনো উপযুক্ত ব্যক্তি যাদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সফলতার ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে তাদেরকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নির্বাচন করা; মধ্যস্থতাকারী নিযুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিরোধীয় পক্ষগণ ও মধ্যস্থতাকারী পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে পারিশ্রমিকের পরিমাণ, পরিশোধকারী পক্ষ ইত্যাদি নির্ধারণ এবং যথাসময়ে তা পরিশোধ নিশ্চিত করা; এবং মধ্যস্থতাকে সফল করা এবং খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ের স্বার্থে প্রয়োজনে কেস টু কেস ভিত্তিতে বিদ্যমান বিআরপিডি সার্কুলার/নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংক কর্তৃক ছাড় প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, মধ্যস্থতার মাধ্যমে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী শাখা/সংশ্লিষ্ট টিমকে স্বীকৃতি প্রদান/পুরস্কৃত করার পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা রেখে ব্যাংকসমূহ বিদ্যমান আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারসমূহের নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করবে এবং মধ্যস্থতায় ব্যর্থতার ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধান করতঃ প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এছাড়াও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি অনুসরণের মাধ্যমে আগামী ৩০ জুন ২০২৬ তারিখের মধ্যে প্রত্যেক ব্যাংকের খেলাপি ঋণস্থিতির ন্যূনতম ১ শতাংশ নগদ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। প্রতি ষান্মাসিকে অনুষ্ঠিত পরিচালক পর্ষদের সভায় এতদসংক্রান্ত অগ্রগতি বিষয়ক স্মারক উপস্থাপন করতে হবে। পরিচালক পর্ষদ আদায় অগ্রগতির বিষয়ে অবগত হয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। মামলা দায়েরের পূর্বে মধ্যস্থতার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় সংক্রান্ত তথ্য সংযোজনী-‘ক’ অনুযায়ী বিআরপিডি সার্কুলার নং- ১১/২০০০ এর বিআর-৪ বিবরণীর সাথে সংযুক্তি হিসেবে পরিচালক, ব্যাংকিং প্রবিধি নীতি বিভাগ (ডিভিশন-২), বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর প্রেরণ করতে হবে।