শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক বিকাশে খেলাধুলা জরুরি উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, খেলাধুলার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আত্মার বিকাশ ঘটে।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার পিয়ার আলী ডিগ্রি কলেজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
পিয়ার আলী ডিগ্রি কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণ ও নবীনবরণ উপলক্ষে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ।
এ জন্য খেলাধুলা খুব জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, খেলাধুলায় শরীর-মন যেমন ভালো থাকে, তেমনি আমরা মাঠে অনেকগুলো গুণের চর্চাও করতে পারি। খেলাধুলার মাঠে সততার চর্চা, একতাবদ্ধ থাকার শিক্ষা, অন্যের সঙ্গে মানিয়ে চলা, খেলার মাঠেই হার-জিত দুটোকেই মেনে নেওয়ার মতো মানসিক শক্তিও তৈরি হয়। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়েও মনের বিকাশ, আত্মার বিকাশ ঘটে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি। আমাদের ইতিহাস রয়েছে, ঐতিহ্য রয়েছে। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, কৃষ্টি- এসবের বিশাল একটি গভীরতা রয়েছে। আমাদের পক্ষেই সম্ভব একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, সুখী, শান্তিময় ভবিষ্যৎ তৈরি করা। আমাদের যারা শিক্ষার্থী আছে তারাই পারবে শুধু সুনাগরিক নয়, বিশ্ব নাগরিক হতে। সে জন্যই আমাদের চেষ্টা করতে হবে।
এই চেষ্টার অংশ হিসেবে শুধু পরিবর্তন বা সংস্কার নয়, একটি রূপান্তর ঘটাতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারণ আমাদের সামনে একটি লক্ষ্য আমাদের রয়েছে- ২০৪১ এ উন্নত সমৃদ্ধশালী, সুখী শান্তিময়, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য। আমাদের সামনে রয়েছে ২০৩০ এর আন্তর্জাতিক অঙ্গিকার টেকসই উন্নয়নের (এসডিজি) লক্ষ্য অর্জন। আমাদের রয়েছে ২০৩১ সালের মধ্যে ডেমোগ্রাফি ডিবিডেন্ট অর্জন করার সুযোগ।
মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। জাতির পিতার আদর্শ মুছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল, জাতির পিতার বেঁচে থাকা কন্যাদেরও হত্যার মাধ্যমে নির্বংশ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বাঙালি হার মানেনি। বাঙালির ইতিহাস আছে একুশের, বাঙালির ইতিহাস আছে একাত্তরের। জাতির পিতাকে শারীরিকভাবে হত্যা করলেও তার আদর্শ কেউ মুছে দিতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও সংগ্রামে জাতির পিতার আদর্শে বাঙালি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার হাত ধরেই বাংলাদেশ আবার ফিরে গিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, আবার ফিরে গিয়েছে শোষিতের গণতন্ত্রের কাছে। আজকে তার কন্যা এ দেশকে দারিদ্র বিমোচনের বিরাট জায়গায় নিয়ে এসে এখন বাবার মতো অনায়াসেই বলতে পারেন- আমি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। শেখ হাসিনা বাবার স্বপ্ন পূরণে মানুষের মৌলিক চাহিদা তার নেতৃত্বে পূরণ করতে পেরেছে, এটি হলো ১৯৭৫ এর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় জবাব। আজ শেখ হাসিনার সরকার সকল সুযোগ-সুবিধা মানুষের দৌরগোড়ায় নয়, হাতে হাতে পৌঁছে দিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সবার আগে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষা। এ জন্যই আমরা শিক্ষায় রূপান্তর ঘটিয়েছি। আমরা নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা স্বত্বেও এ বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে এসেছি। করোনার সময়ে আমাদের শিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে তা বের করার জন্য আমরা গবেষণা করেছি। আমাদের গবেষণা বলছে- এতে শিক্ষার্থীদের খুব ক্ষতি হয়নি বরং লাভ হয়েছে।
করোনাকালে শিক্ষার্থীরা নিজে নিজে শেখার অভ্যাস গড়ে তুলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শেখার প্রবণতা তৈরি হয়েছে, দক্ষতা তৈরি হয়েছে। এরপরও আমরা থেমে থাকছি না। আজকে জাতিসংঘ বলছে- দক্ষিণ এশিয়ায় মাধ্যমিকে সবচেয়ে অগ্রগামী বাংলাদেশ। নতুন শিক্ষাক্রমে আমরা ‘ধরে ধরে’ শেখাব, যা শিখবে তা আত্মস্থ করতে হবে। আত্মস্থ করে এর প্রয়োগ করতে হবে। আজকের যুগে মুখস্থ বিদ্যা অচল। শিক্ষার্থীরা ‘করে করে’ শিখবে, সক্রিয় শিখন, অভিজ্ঞতাভিক্তিক শিখন। পরীক্ষাভীতি বলে কিছু থাকছে না, থাকবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন। মূল্যায়ন শুধু শিক্ষক করবে না, তার (শিক্ষার্থী) অভিভাবক করবে, সহপাঠীরা করবে, সে নিজেও করবে।
অপশক্তি নানাভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের কোনোকিছু করতে না পেরে বইয়ের ওপর সওয়ার হয়েছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা সরকারবিরোধী অপতৎপরতায় নেমেছেন। প্রথমে অভিযোগ উঠল- নবম ও দশম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ে ভুল। একটা তথ্যগত ভুল ছিল, সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা সংশোধন করে দেই। এই নবম ও দশম শ্রেণির বইগুলো ২০১৩ সালের। ১০ বছরে এগুলো আমাদের নজরে আসা প্রয়োজন ছিল, যদিও আসেনি। কারণ, লেখক-সম্পাদক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছাড়া বই তেমন কেউ পড়ে না।
তবে এবার সবাই বই পড়ছেন এ জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বই পড়ে খুঁজে খুঁজে ভুল বের করছেন। যারা বই পড়ছেন তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা। আপনাদের এই প্রচেষ্টার ফলে আগামীতে বই নির্ভুল হবে।
কিন্তু এরপর অপপ্রচারকারীরা নতুন বইয়ে যা নেই তা নিয়ে মিথ্যাচার শুরু করে জানিয়ে তিনি বলেন, বইয়ে কোথাও লেখা নেই- বানর থেকে মানুষ হয়েছে বরং বলা আছে বানর থেকে মানুষ হয়েছে এটা ঠিক নয়। আরও অনেকে প্রশ্ন তুললেন, সবই মনগড়া, কেন? নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর আপনাদের এত আগ্রাসন বলে অপপ্রচারকারীদের উদ্দেশ্য।