ট্রেনে সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে যাওয়ার দুয়ার খুলেছে। শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে উন্মোচিত হলো বহুমাত্রিক সম্ভাবনার দ্বার।
যোগাযোগ, শিল্পায়ন, পর্যটন, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের রেলগাড়ি ছুটবে এই পথ ধরে। সব মিলিয়ে ১৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি এই অঞ্চলের সার্বিক অর্থনীতিতে আনবে নতুন প্রাণ। কক্সবাজার হয়ে উঠবে দেশের অর্থনীতির নতুন দুয়ার।
সেখান থেকে সড়কপথে যান আইকনিক রেলস্টেশনে। সেখানে চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেললাইন এবং কক্সবাজারে আইকনিক রেলস্টেশন উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সুধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন কক্সবাজারের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির, রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল হাসান, দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন।
১০২ কিলোমিটারের এই রেলপথের ছোঁয়ায় সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, আনোয়ারাসহ আশপাশের অর্থনীতির চিত্র পাল্টে যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কারণ এ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনসহ মোট ৯টি স্টেশনের মাধ্যমে রেলপথে সংযুক্ত হবে এলাকাগুলো।
২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায় দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প। ২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন। পরে এক দফা বাড়ানো হয়। এতে ব্যয় বেড়ে হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পে ঋণসহায়তা দেয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
রেলপথটি নির্মিত হওয়ায় মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডোরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। কক্সবাজার পরিণত হবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনের তীর্থ স্থান। কক্সবাজারে যেতে এখনো পর্যটকদের প্রধান ভরসা সড়কপথ। আকাশপথে আসা পর্যটকের সংখ্যা সীমিত। পর্যটন অর্থনীতি চাঙা থাকে মূলত শুষ্ক মৌসুমে। রেল যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার ফলে সারা বছর পর্যটক পাওয়ার আশা করছেন হোটেল-মোটেলের উদ্যোক্তারা। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে প্রকৃত অর্থেই সারা বছর চাঙা থাকবে পর্যটন অর্থনীতি।
স্থানীয়দের মধ্যেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।