থানায় চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলার আসামি ও রেলওয়ে পুলিশের সাবেক পরিদর্শক উছমান গনি পাঠানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর রোববার (২২ মে) বিকেলে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামি উছমান গনি। আদালতের বিচারক মাহমুদা খাতুন তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট ভুক্তভোগী নারী যশোরে ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। পরদিন যশোর থেকে ট্রেনে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। পরে ট্রেনের টয়লেটে যান তিনি। সেখান থেকে বের হতেই একজন নারী পুলিশ সদস্যসহ আরও দুজন পুলিশ সদস্য তাকে কোনো কিছু না বলেই আটক করেন।
ওই সময় উপস্থিত নারী পুলিশ সদস্য তাকে চড়ও মারেন। এতে তার বাম চোখে জখম হয়। দুপুরের দিকে ট্রেন খুলনায় পৌঁছালে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। এসময় ভুক্তভোগী ওই নারীর সঙ্গে তার কন্যাসন্তানও ছিল।
রাতে পুলিশ পরিদর্শক উছমান গনি থানায় আসলে আটক নারী তাকে বলেন, ‘পুলিশ আমার কাছে কোনো কিছু পায়নি। তাহলে আমাকে কেন আটকে রাখা হয়েছে?’ তখন থানা হাজত থেকে বের তাকে পরিদর্শক উছমান গনির কক্ষে নেওয়া হয়।
উছমান গনি অন্য পুলিশ সদস্যদেরকে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এসময় পুলিশ কর্মকর্তা উছমান ভুক্তভোগীর শরীরে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে চিৎকার করলে তাকে আবার থানা হাজতে ঢোকানো হয়।
ওইদিন দিনগত রাত ১টার দিকে আবারও থানায় আসেন পুলিশ পরিদর্শক উছমান গনি। রেলওয়ে থানার একজন ডিউটি অফিসার রাতে চোখ বেঁধে তাকে ওসির কক্ষে দিয়ে আসেন। এসময় ওড়না দিয়ে তার মুখ বাঁধা হয়। চোখের বাঁধন খোলার পর পরিদর্শক উছমান ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। পরে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী খুলনা রেলওয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শকসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্যের নামে রেলওয়ে থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে রেলওয়ে পুলিশ। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রেলওয়ে পাকশী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
পরে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি উছমান গনির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেয় পুলিশ। তবে খুলনা জিআরপি থানার অন্য পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়, বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।