বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি জানিয়েছেন তার চিকিৎসক টিমের প্রধান প্রফেসর ডা. এফএম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, করোনার বিষয়টি নিয়ে আগে থেকে কিছুই বলা যায় না। আমরা সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সেরকম কিছু হলে দ্রুত আমরা হাসপাতালে শিফট করতে পারবো। এখন আমরা দ্বিতীয় সপ্তাহের জটিল সময়টা পার করছি। শনিবার(১৭এপ্রিল) রাত এগারোটার দিকে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনের সামনে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন।
ডা. সিদ্দিকী বলেন, কিছুক্ষণ আগে সবাই মিলে ম্যাডামের শারিরীক অবস্থা দেখে এসেছি। ওনার যেটা টেম্পারেচার গত তিন দিন ধরে একটু বেশি ছিল, সেটা শুক্রবার পর্যন্ত ছিল। আমরা সিটিস্ক্যান ও অন্যান্য রিপোর্টগুলো নিয়েও বসেছি। এখন দেখলাম টেম্পারেচারের প্যাটার্নটা কমে এসেছে। শুক্রবার যেমন সন্ধ্যার পর পর্যন্ত জ্বর ছিল। শনিবার সারাদিন জ্বর আসেনি। সন্ধ্যার পর এসেছে। আমরা এখন মেপে এসেছি সেটা ১০০.০২। তো আমরা যে নতুন অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধটা শুরু করেছি, সেটা আজকে তৃতীয় দিন। মনে হচ্ছে যে সেটার ভালো রেজাল্ট পাচ্ছি। আর আমরা ওনার পালস, ব্লাড প্রেসার, রেসপিরেশন চেক করেছি এগুলো ভালো আছে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ওনার সব সময় ৯৭/৯৮ থাকছে। উনি একটু হেঁটেও স্যাচুরেশন ঠিক থাকছে।
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে আজকে নবম দিন। অর্থাৎ আমরা দ্বিতীয় সপ্তাহের জটিল সময়টা পার করছি। কোনো রকমের বিপদ সংকেত যদি আমরা পাই, তাৎক্ষণিক সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। কিন্তু এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ সব কিছু ঠিকঠাক মতো হচ্ছে। কিন্তু আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি, যে এই পুরো সপ্তাহ না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের মধ্যে কোনো শিথিলতা দেখা দেবে না। আমরা প্রথম থেকে যেভাবে ওনাকে ক্লোজ মনিটর করে যাচ্ছিলাম, ঠিক সেভাবে মনিটরিংটা চালিয়ে যাচ্ছি এবং চালিয়ে যাব।
হাসপাতালে নেওয়া হবে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি মনে করি তাহলে হাসপাতালে খুব দ্রুত শিফট করতে পারবো। কিন্তু এখন পর্যন্ত হাসপাতালে নেওয়ার মতো কিছু দেখা যাচ্ছে না। স্ট্যাবল আছেন। সবকিছু মিলিয়ে স্থিতিশীল বলা যায়। আগের দিনের তুলনায় যদি বলি আজকে সারাদিন জ্বর আসেনি। সন্ধ্যার পরে একটু এসেছে। সারাদিনেতো মনে হচ্ছে একটু ইম্প্রুভমেন্ট আছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, যে এই সময়গুলোতে একটা প্যারামিটার দিয়েই কিন্তু সবকিছু মূল্যায়ন করা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, সিটিস্ক্যান রিপোর্টে আমরা পেয়েছি, যে খুব ন্যূনতম ইনভলবমেন্ট আছে, খুবই কম। আপনারা জানেন, আমরা সবাই করোনা রোগীর চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত। গত একবছর ধরে শত শত রোগী দেখেছি। আমরা দেখেছি, যে প্রথম সপ্তাহ শেষে প্রায় ৩০ থেকে ৬০ ভাগ ইনভলব হয়ে যায়। রোগী কিছু বোঝার আগেই সিরিয়াস ইনভলবমেন্ট হয়ে যায়। সেই তুলনায় আমরা বলতে পারি, ওই ধরণের ইনভলবমেন্টতো নাই, খুব ন্যূনতম। তারপরও এটাকে আমি পার্সেন্ট হিসেবে বলতে চাই না।
ডা. সিদ্দিকী বলেন, তিনি যখন গত বছর মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল থেকে বাসায় আসলেন, তখন ওনার মারাত্মক ক্ষুধামন্দা ভাব ছিল, ডায়াবেটিস ও শরীরের ব্যথাও অনিয়ন্ত্রিত ছিল। কিন্তু আমরা টেকওভার করার পরে একমাসের মধ্যে ওনার হেপেটাইট ফিরে এসেছিল। ব্লাড সুগার যেটা ১১ এর ওপরে ছিল, সেটা আমরা চিকিৎসা করে ৮ এর ঘরে নিয়ে এসেছিলাম। সে কারণে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও ওনাকে মোটামুটিভাবে ভালো অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এটাকেই সবকিছু শেষ বলতে চাই না। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে করোনা রোগী একবার ভালো হয়ে যায়। অনেক সময় ডিসচার্জ নিয়ে বাসায় যেয়ে খারাপ হয়ে গেছে। কাজেই আমাদের সবগুলো অভিজ্ঞতা মনে রেখেই ওনার চিকিৎসা করতে হবে।
ফুসফুসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অক্সিজেন স্যাচুরেশন যখন শুনবেন ৯৭/৯৮ এবং সেটা হাঁটাচলার পরেও ঠিক থাকে, তখন বুঝবেন ফুসফুসের দিক থেকে উনি ভাল আছেন। মানসিকভাবে তিনি খুবই শক্ত আছেন। একটু আগেও তিনি বলেছেন-টেলিভিশনে দেখেন যে দলের সিনিয়র নেতারা কথা বলেন, কিন্তু মাস্ক পরেন না। তিনি বলেন যে ওরা মাস্ক পরে না। মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে কথা বলে। এটা কেমন কথা। মাস্ক যদি পরে সবার সঠিকভাবে পরা উচিত। এর আগে চিকিৎসক টিম রাত সোয়া ৯টায় খালেদা জিয়ার বাসায় প্রবেশ করেন এবং এগারোটার দিকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।