বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে করা বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি মামলায় অপরাধের উপাদান রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ কারণে মামলা বাতিলে আবেদনকারী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের (প্রয়াত) আবেদন খারিজ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদনকারী বিএনপি নেতা আমিনুল হক ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।
আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। ব্যারিস্টার আমিনুল হকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক। সোমবার (২৪ মে) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। ৬৮ পৃষ্ঠার এ রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, মামলায় অপরাধের উপাদান রয়েছে। রায় পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে এ মামলা নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের নাম বাদ যাবে। কিন্তু দায় তো থেকে যাবে।
২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আমিন উদ্দিন মানিক জানিয়েছিলেন, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল আলম ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় এই মামলা দায়ের করেন। ওই বছরের ৫ অক্টোবর ১৬ আসামির বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মো. আবুল কাসেম ফকির দণ্ডবিধি আইনের ৪০৯/১০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়াও মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান (মৃত), সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মৃত), সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী (মৃত্যুদণ্ড কার্যকর), সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মো. মুজাহিদ (মৃত্যুদণ্ড কার্যকর), এম কে আনোয়ার (মৃত), এম শামসুল ইসলাম (মৃত), ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিনুল হক (মৃত), একেএম মোশাররফ হোসেন (মৃত), জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান এস আর ওসমানী, পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মঈনুল আহসান, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও খনির কাজ পাওয়া কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন।
আমিন উদ্দিন মানিক আরও জানান, ২০০৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি বাতিলের জন্য ফৌজদারি বিবিধ মামলা দায়ের করলে ১৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এই মামলায় রুল ও স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। যেটি ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি খারিজ হয়ে যায়। এর আগে এ মামলার বৈধতা নিয়ে খালেদা জিয়ার করা রিট ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর খারিজ করে দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি আবদুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে তা আপিল বিভাগেও খারিজ হয়ে যায়।