বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি কাটাতে সরকার খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো এবং জ্বালানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। করোনার অভিঘাতের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সব দেশই খাদ্য নিয়ে সংকটের মুখে পড়েছে। যেসব দেশ খাদ্য রপ্তানি করে সেসব দেশও অভ্যন্তরিণ চাহিদার কারণে রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে—এমন আশঙ্কাও বিদ্যমান। এমন বাস্তবতায় প্রশাসনকে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়নে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে, সরকারি ব্যয় কমাতে কৃচ্ছ্রসাধন কার্যক্রমের আওতা আরো বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় উপস্থিত সচিবদের তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা আলোচনা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিব সভা সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। এ সভায় সকল সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সচিবদের ঐ সভায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তায়। আলোচনার ক্রমে এটিকে শুরুতেই স্থান দেওয়া হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সভায় উত্থাপিত কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ ১৬ লাখ মেট্রিক টন। সংকট যাতে না হয় সেজন্য আমদানি এবং উৎপাদন দুটি ক্ষেত্রকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সভায় বলা হয়, আসছে বছর কঠিন সময় পার করতে হবে। চীন ও রাশিয়ায় উৎপাদন কমেছে। এজন্য সংকট আরো বাড়বে। এ কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোনো রকম জমি যেন অনাবাদি না থাকে সে জন্য মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী মনোভাব নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ডলারসংকট মোকাবিলায় বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন। যেসব কার্যক্রম আগামী অর্থবছরে বাস্তবায়ন সম্ভব সেগুলো চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়ন না করার পক্ষে মত দেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন কার্যক্রম চালু রেখে এর আওতা বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে সভায়। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া বিলাসসামগ্রীর আমদানি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। এ সংক্রান্ত কার্যপত্রে বলা হয়েছে যে, আমদানি নির্ভরতা এবং চাষের জমির স্বল্পতার কারণে উৎপাদন বাড়ার সুযোগ কম। ভারতের উৎপাদন কম হলে সে দেশের রপ্তানি বন্ধের ঝুঁকি রয়েছে। দূরবর্তী দেশ থেকে আমদানি করা হলে তাতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। এছাড়া আমদানি পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হাতে সীমাবদ্ধ থাকায় একচেটিয়া মূল্য নির্ধারণের ঝুঁকিও আছে। সচিব সভায় দেশের আর্থিক খাত নিয়েও বিশদ আলোচনা হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাবে দেশের জনগণের ওপর মূল্যস্ফীতির যে চাপ পড়েছে তা মোকাবিলায় সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
বিশেষ করে সরকারি ব্যয় কমানোর মাধ্যমে বার্ষিক চাহিদা কমিয়ে সরবরাহ অব্যাহত রাখার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। সভায় বলা হয়, খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে সুষ্ঠু খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। দেশে খাদ্যঘাটতি যাতে না হয় সেজন্য চলতি অর্থবছরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ লাখ টন চাল এবং এবং সাড়ে ৬ লাখ টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুল্ক বাড়ানোর মাধ্যমে বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুত্সাহিত করা হয়েছে। যেসব দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক চুক্তি রয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় জানানো হয়, ২০১৭ সালে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে করা এক সমঝোতা স্মারক এ বছর বাস্তবায়ন হয়েছে।
এদিকে সচিব কমিটির বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গতকালের বৈঠকে কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ কেলেংকারি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাংকিং বিভাগকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে শিল্পবিপ্লবের ১০ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কীভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গতকালের বৈঠকে জঙ্গি বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তারা যাতে কারো সহায়তা না পায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।