লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে মূল্যস্ফীতির হার। লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ছাড়িয়েছে ২০০ টাকা। যার প্রভাবে মে মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, যা আগের মাস এপ্রিলে ছিল ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ।
তবে মে মাসে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, যা আগের এপ্রিল মাসে ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মে মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ হয়েছে। যা গত এপ্রিলে ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।
রোববার (১৯ জুন) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া মে মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ তথ্যে এমনটিই জানা গেছে।
ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে সাধারণ ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অথচ সম্প্রতি বাজেট ঘোষণার পূর্বাপর রেকর্ড হারে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ, খাদ্য খাতে যা ছিল ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং খাদ্য-বহির্ভূত খাতে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর মানে আজ থেকে এক দশক আগে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৮ শতাংশ ছাড়াই।
সরকারি সংস্থা বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মে মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এর অর্থ হলো, ২০২১ সালের মে মাসে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২২ সালের মে মাসে একই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৭ টাকা ৪২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। মে মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর অর্থ হলো, ২০২১ সালের মে মাসে যে খাদ্যপণ্য বা খাবারের জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, চলতি বছরের মে মাসে একই খাবারের জন্য ১০৮ টাকা ৩০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
গত মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত কয়েক মাসের মতো মে মাসেও শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। যেখানে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ আর শহরে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ হিসাবে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে পণ্যমূল্য ও অন্য সেবাসমূহের দাম বেশি বেড়েছে।
৮৭টি নিত্যপণ্যের মধ্যে বেশিরভাগেরই দাম বেড়েছে: বিবিএসের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ৮৭টি অত্যাবশীয় নিত্যপণ্যের মধ্যে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে অধিকাংশেরই দাম বেড়েছে। মে মাসে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ টাকা ১৫ পয়সা, যা গত এপ্রিল মাসে ছিল ৬৯ টাকা ১১ পয়সা। এসময়ে পায়জাম চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৬২ টাকা ৭২ পয়সা, যা এপ্রিলে ছিল ৫৮ টাকা ৫ পয়সা।
এক মাসের ব্যবধানে একইভাবে দাম বেড়েছে বোরো, আটা, মুগডাল, গুঁড়, রুই মাছ, ইলিশ, শিং মাছ, মাংস ও ডিম-দুধেরও। সয়াবিন, শুকনা মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলু, কাঁচা মরিচ, পেঁপে, দুধ, কাপড় ও মেলামাইনের বাসনের দামও চড়া। এছাড়া সিমেন্ট, কেরোসিন, নারকেল তেল, সিগারেট ও সাদা কাগজের দামও ঊর্ধ্বমুখী। তবে এসময়ে দিয়াশলাই ও ব্লেডের দাম বাড়েনি।