রাজধানীর মহাখালীতে খাজা টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় দুই নারীসহ তিন জন নিহত হয়েছেন। এরা হলেন হাসনা হেনা, রফিকুল ইসলাম ও আকলিমা রহমান। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। যদিও ফায়ার সার্ভিসের ধারণা শর্টসার্কিটে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার পর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ভবনটির অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানানো হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে আগুন লাগার পর ভবন থেকে তার ধরে নামতে গিয়ে ৯ তলা থেকে নিচে পড়ে হাসনা হেনা নামে এক নারী নিহত হওয়ার পর আরো দুটি লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। তারা হলেন সাইফ পাওয়ার টেক কোম্পানির প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম ও রেস অনলাইন লিমিটেডের কর্মী আকলিমা রহমান। নিহত আকলিমার মামাতো ভাই আজিম বলেন, বিকাল ৪টার দিকে আকলিমা ফোন দিয়ে আগুনের কথা জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে জানিয়েছিলেন তিনি আটকা পড়েছেন। এরপর তাকে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পাওয়া যায়নি। রাত ১২টা ৩৫ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তার মরদেহ উদ্ধার করে। জানা গেছে, আকলিমার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার থানার সৈয়দপুর গ্রামে। রাজধানীর বসিলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
নিহত প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. নাজমুল সাকিব জানান, তার বাবা সাইফ পাওয়ার টেক নামে একটি কোম্পানির সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঐ ভবনের ১৩ তলায় ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। রফিকুল ইসলাম মিরপুর শাহআলীবাগের একটি বাসায় পরিবারসহ থাকতেন। নিহত তিন জনের লাশই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। খাজা টাওয়ারের কর্মীরা জানান, খাজা টাওয়ারের মালিক ছয় ভাই। এটা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। তাদের মধ্যে দুই ভাই এবং এক জনের ছেলে গতকাল শুক্রবার ভবন দেখতে আসেন।
অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, খাজা টাওয়ারে অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা ছিল না। ভবনটিতে দাহ্য পদার্থ বেশি থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কততলা থেকে আগুন লেগেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগুন লাগার দুটি মত আছে। কেউ বলছেন চারতলা থেকে ৯, ১০ ও ১১ তলায় দ্রুত ছড়িয়েছে। আবার কেউ বলছেন, ১১ তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে আপাতত মনে হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে হয়তো আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিস ভবনটি থেকে মোট ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে সাত জন পুরুষ ও তিন জন নারী।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে খাজা টাওয়ারে আগুন লাগে। পরে আগুন নেভাতে পর্যায়ক্রমে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ১২ ইউনিট। এছাড়া ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করেন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও সাত প্লাটুন আনসার সদস্য ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়। এরপর প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।