দেশের তিন জেলায় কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে খুন হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের তিন নেতা। রোববার (১৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টা থেকে সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৭টার মধ্যে পৃথক তিনটি খুনের ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে যশোরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হয়েছেন এক ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি। রাজবাড়ীতে ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আর ঝিনাইদহে দলীয় কোন্দলে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি প্রভাষক উদয় শংকরকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার টেকারঘাট বাজারে এই ঘটনা ঘটে।
প্রভাষক উদয় শংকর নেহালপুর ইউনিয়নের পাঁচাকড়ি গ্রামের রনজিত বিশ্বাসের ছেলে। তিনি নেহালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক ও টেকেরঘাট বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি।
মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন এই হত্যার খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তবে কী কারণে তাকে খুন করা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সহসভাপতি মুন্না আজিজ মহাজনকে (৪১) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার (১৫ অক্টোবর) রাতে বাড়ি ফেরার পথে তিনি খুন হন।
বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, আজিজ মহাজন নারুয়া ইউনিয়নের কোনগ্রামে একটি দলীয় অনুষ্ঠান শেষ করে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় তাকে গতিরোধ করে কুপিয়ে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বালিয়াকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। পরে তার অবস্থার আরও অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়। রাত ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রেজাউল করিম জানান, জমিজমাসংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের সূত্র ধরে মুন্না আজিজ মহাজন নামের একজনকে প্রতিপক্ষ রেজাউল মহাজন ও তাদের লোকজন তাকে অতর্কিত আক্রমণ করে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে মুন্না ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় মুন্নার ভাই আব্দুর রহমান বাদী হয়ে একটি অভিযোগ বালিয়াকান্দি থানায় দাখিল করেছেন। মামলা রেকর্ডের প্রস্তুতি চলছে।
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব ও গ্রাম্য দলাদলিকে কেন্দ্র করে হাবিবুর রহমান রিপন (৪৩) নামে এক ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা।
রোববার (১৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের বাজারে ওয়াপদা গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঠাকুর দাস মণ্ডল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রিপন আবাইপুর ইউনিয়নে ৭ নম্বর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ছিলেন। তিনি একই ইউনিয়নের মীন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক ছিলেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি ঠাকুর দাস মণ্ডল জানান, গ্রাম্য দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইউপি সদস্য রিপনের সঙ্গে এলাকার অন্য একটি আওয়ামী লীগের গ্রুপের দ্বন্দ্ব ছিল। এ নিয়ে রাত ২টার দিকে উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের বাজারে ওয়াপদা গেটের সামনে প্রতিপক্ষরা রিপনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে ফেলে রেখে যায়। পরে ওই ইউপি সদস্যকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিলে রাত ৩টার দিকে সেখানে তার মৃত্যু হয়।