ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর ৫ দিন পর ট্রলারযোগে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে গেলে খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবুকে কাদা ছুড়ে মেরেছেন বাঁধে কাজ করা উত্তেজিত জনতা। এ সময় তাদের তাড়া খেয়ে ট্রলার নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন এমপি। পরিস্থিতি শান্ত হলে তিনি আবারো ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তখন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে করা কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই চলে যান স্থানীয়রা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ভাঙন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গেই তারা কাজ করছিলেন। এমন সময় সংসদ সদস্য এসেছেন শুনেই দেখতে পান সাধারণ মানুষ কাদা ছুড়ে মারছে। এতে সংসদ সদস্যের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাদা লাগে। চেষ্টা করেও সাধারণ মানুষকে নিবৃত্ত করা যায়নি। প্রায় এক ঘণ্টা পর মানুষ একটু শান্ত হলে সংসদ সদস্য আবার বাঁধের কাছে এসে সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দিয়ে কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করেন। তবে এরপর বাঁধের কাজ আর হয়নি। এ কারণে বাঁধ পুরোপুরি মেরামত করা যায়নি। তবে ওই ঘটনা না ঘটলে বাঁধটি পুরোপুরি মেরামত হয়ে যেত।
সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান জানিয়েছেন, তাকে বহনকারী ট্রলারে কাদা ছুড়ে মারা হয়নি। প্রতিবছর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কয়রাবাসী। এ জন্য তারা টেকসই বেড়িবাঁধ চান। তিনি বলেন, ভাঙন এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ কাজ করছিলেন। সেখানে গেলে তাকে দেখে মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তাদের এ দাবি যৌক্তিক। বারবার বাঁধ ভাঙে আর বারবার স্বেচ্ছাশ্রমে তাদের কাজ করতে হয়। এ কারণে সংসদ সদস্যের ওপর তাদের ক্ষোভও বেশি। তবে এ ঘটনার পর স্থানীয়রা বাঁধের অসম্পূর্ণ কাজ না করেই চলে যান।
স্থানীয়রা জানান, ইয়াসের পর ওই এলাকার বাঁধ ভেঙে মহারাজপুর ও পাশের বাগালী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে গত ২৬শে মে ভেঙে যাওয়া ওই বাঁধটি এখনো মেরামত করা হয়নি। সংসদ সদস্যের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা জানান, এমপি সাহেব পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। তার আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের ওই ঠিকাদারির কাজ দেয়া হয়। এ কারণে বাঁধের কাজের মান ভালো হয় না। তাই জোয়ারের পানি সামান্য বাড়লেই ভেঙে যায় বাঁধ। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। এব্যাপারে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে।