কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটনপিয়াসীরা সকলেও এই ঘোড়াগুলোকে চেনেন। কম-বেশি সকলেই এতে সওয়ার হয়ে ঘোড়ায় চড়ার সাধ মিটিয়েছেন। কিন্তু কেউ কী জানেন করোনা মহামারীতে কেমন আছে ঘোড়াগুলো। তাদের জন্য খবর হচ্ছে- এই মহামারী দুর্যোগে না খেতে পেয়ে মরে গেছে ২১টি ঘোড়া। ঘোড়াগুলোর মালিকদের বরাত দিয়ে এই খবর আসছে সংবাদমাধ্যমে। সে খবর এমনই একদিন প্রকাশিত হলো যেদিন, সরকার আরও এক সপ্তাহ দেশব্যাপী লকডাউন বাড়িয়ে ৬ জুন পর্যন্ত বিধি-নিষেধ আরোপ করলো। আর একই সঙ্গে ওই ঘোষণাও এলো সংক্রমণ ৫ শতাংশ না নেমে আসা পর্যন্ত বিধি-নিষেধ বলবৎ থাকবে। এই বিধি-নিষেধের অন্যতমই হলো পর্যটন এলাকাগুলো বন্ধ রাখা।
কিন্তু তাতে পর্যটনকে ঘিরে যাদের জীবিকা তাদের জীবন এখন দুর্বিসহ। মানুষগুলোই খেতে পায় না। এ অবস্থায় পর্যটনের অনুসঙ্গ ঘোড়ার পেটে খাবার দেওয়া ছিলো দুষ্কর। আর তাতে না খেতে পেয়েই মরে গেলো অন্তত ২১টি ঘোড়া।
এই ঘোড়ার মালিক যারা তাদেরও একটি সমতি রয়েছে। সেই সমিতির একজনকে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস আঘাত হানার পর থেকেই কক্সবাজারে মানুষের আনাগোণা কমছে, আর তাতে নিজেদের পেটেই আর ভাত জোটে না ঘোড়ার মালিকদের। পশুগুলোকে তারা খাওয়াবেন কি করে?
এখানে এই মালিকদের মোট ৯০টি ঘোড়া রয়েছে। যার মধ্যে গত এক মাসে ২১টি এরই মধ্য মারা পড়েছে। বাকিগুলোরও এখন মরমর দশা। এতো এই বছরের চিত্র। এর আগে ২০২০ সালের লকডাউনের সময়ে মারা যায় ৪১টি ঘোড়া। কোনো কোনো মালিক তাদের ঘোড়াগুলোকে খাবার দিতে না পেরে এমনি ছেড়ে দিয়েছেন, যদি সেগুলো ঘুরে-ফিরে নিজেদের খাবার নিজেরাই যোগাড় করে খেতে পায়। কেউ কেউ বলছেন, নিজেদের পরিবারের সদস্যদের পেটে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার দিতে ঋণ করে চলছে তাদের। এমনকি সেই ঋণের টাকা শোধ করতেও তাদের এখন ত্রাহি দশা। যতদিনে না কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে, ততদিনে তাদের এই দশা ঘুচবে না।
শুধু যে মালিকেরা, তা নয় এই ঘোড়াগুলো মালিকদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে সমুদ্র তীরে ঘোড়া ছুটিয়ে পর্যটকদের আনন্দ দিয়ে জীবিকা হতো আরো শতাধিক মানুষের। তারাও আজ কর্মহীন। কেউ কেউ অবশ্য ঘোড়া ছোটানো ছেড়ে রিকশা চালাচ্ছেন, নয়তো নির্মাণ শ্রমে যোগ দিয়েছেন।
ভর পর্যটন মৌসুমে একটি ঘোড়াকে কেন্দ্র করে দিনে ২০০০ টাকা করে আয় হতো। যা এখন একেবারেই বন্ধ।
এ অবস্থায় ঘোড়ার মালিকদের পক্ষ থেকে সরকারি সহযোগিতার দাবি জানানো হয়েছে। কিছু কিছু সহায়তা তারা পেয়েছেন, তবে তা দিয়ে নিজেদের পরিবারকেই খাবার যোগাড় করে দিতে হয়েছে, ফলে ঘোড়াগুলো অভুক্তই থেকে গেছে এবং যাচ্ছে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোড়াগুলোকেও এখন কিছু কিছু খাবার বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। মে মাসে এখানে ঘোড়ার মালিকদের মাঝে ১৪৬ বস্তা ভূসি ও ২০ ক্যান ঝোলাগুড় বিতরণ করা হয়েছে।