রোববার বিকেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন (পিইউএসএবি) গ্রুপে এমন ঘোষণা দেন ইস্ট ওয়েস্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে একই ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিসহ আরও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ব পরাশক্তিদের মদদে ইসরায়েলি সরকারের ফিলিস্তিনে চালানো গণহত্যায় গাজায় বৃষ্টির ন্যায় প্রাণ ঝরছে। নবজাতক, শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ নির্বিচারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। আহতদের চিকিৎসা প্রদানে এগিয়ে আসা স্বাস্থ্যকর্মীদেরও হত্যা করা হচ্ছে। সারা বিশ্বের মুসলমান জাতির বুকে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হলেও মুসলিম বিশ্বের পরাশক্তিদের নির্বিকার ভূমিকা আমাদের চরম আশাহত করেছে। মানবতার খাতিরে গড়ে ওঠা আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহের সামনেই বারবার মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হওয়া আমাদের লজ্জিত করে। বিশ্ব পরাশক্তি ও আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহের এমন নিষ্ক্রিয় ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আগামী ৭ এপ্রিল (সোমবার) সারাবিশ্বে অনুষ্ঠাতব্য “দ্য ওয়ার্ল্ড স্টল ফর গাজা” কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সব ক্লাস বর্জনের ঘোষণা করছি।
এদিকে ফিলিস্তিনে চলমান নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এবং মজলুম ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা। আগামীকাল সোমবার ফিলিস্তিনি যুবকের ডাকা ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি সফলের আহ্বান জানান তারা। এ ছাড়া, আগামীকাল সারাদেশে ফিলিস্তিনের স্মরণে সংহতি এবং বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সব দেশে একযোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
গাজাবাসীর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ইংরেজি অক্ষরে ছবিতে লেখা রয়েছে, ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপস’ অর্থাৎ গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ ও স্কুল বন্ধ। ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, হ্যাঁ, সংহতি জানাই। আগামীকাল ৭ এপ্রিল ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটে যোগ দিন।
আগামীকাল বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। এক ফেসবুক পোস্টে এ তরুণ নেতা লিখেছেন, মানুষ ও মুসলিম হিসেবে এসব (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-অফিস-আদালত) বন্ধ রাখাতেই আমাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত নয় বরং দল-মত নির্বিশেষে সারাদেশের ছাত্র-জনতা একসঙ্গে রাজপথে নেমে ইসরায়েলি খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত। আমরা হয়ত এই মুহূর্তে আমাদের গাজার ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে পারব না। কিন্তু তাদের লড়াইয়ের সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করতে নিজ ভূমির রাজপথে অন্তত নামতে পারবে।
তিনি বলেন, এনসিপি, বিএনপি-জামায়াত বা কোনো (রাজনৈতিক) দলের ব্যানারে নয় বরং দল-মত নির্বিশেষে ‘বাংলাদেশ’ ব্যানারে আগামীকাল আমরা রাজপথে নেমে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি। খুনি, রক্তপিপাসু নেতানিয়াহুর বিপক্ষে স্লোগান দিতে পারি। প্রত্যেক জেলায় ছাত্র-জনতার প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজন মিলে দায়িত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই কর্মসূচি পালিত হোক। ৭ এপ্রিল কোনও দল, মত, পক্ষের হয়ে নয় বরং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গাজার মজলুম মানুষের পক্ষে হোক।
একই আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। নিজের ফেসবুকে পেজে তিনি লিখেছেন, গাজার প্রতি বৈশ্বিক সংহতির অংশ হোন। আগামীকাল সোমবার, ৭ এপ্রিল ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’— এই কর্মসূচি সফল করুন।
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সর্বশেষ হামলায় দক্ষিণের খান ইউনিসে এক সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উত্তরের গাজা সিটিতে দুই শিশুও নিহত হয়েছে। গাজার খান ইউনিসে এক ভবনে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো বোমা হামলায় কমপক্ষে আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিদিন গড়ে ১০০ ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা বা আহত করছে। এ সংখ্যা বিশ্বব্যাপী গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছ।