বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে অসংখ্য ইভেন্ট রয়েছে। তবে এর মধ্যে বেশি দাপট ফুটবল ও ক্রিকেটের। দুটি খেলাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বড় দুটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা ও আইসিসি। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ফিফা)। কেননা জাতিসংঘ স্বীকৃত ১৯৩ দেশের চেয়েও ফিফার সদস্যসংখ্যা (২১১) বেশি। ফলে ফুটবল যে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, তা নিয়ে কারও দ্বিধা নেই। অন্যদিকে, ফুটবলের চেয়ে পরিসর অনেক সীমিত ক্রিকেটের। তবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ক্রমেই নিজেদের পরিধি বাড়াচ্ছে।
দুই বৈশ্বিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে ফিফা যে আইসিসির চেয়ে ধনী—এ কথা সহজেই বোধগম্য। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে ফুটবল চলে, খেলাধুলা অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি অর্থের ছড়াছড়িও এই খেলাকে কেন্দ্র করে। ব্রিটিশ উপনিবেশে থাকা দলগুলো, আরও স্পষ্ট করে বললে কমনওয়েলথের সদস্যদেশগুলোতেই ক্রিকেটের বিস্তৃতি বেশি। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মতো বিশ্বের জনবহুল এলাকায় জনপ্রিয় বলে ক্রিকেট নিয়েও মাতামাতি কম নয়। সাম্প্রতিক সময়ে টি–টোয়েন্টির সুবাদে আইসিসির মোট সদস্য সংখ্যা ১০৮–এ পৌঁছে যাওয়ায় ক্রিকেটও বিশ্বায়নের পথেই হাঁটছে।
সংস্থা দুটিরই আয়ের উৎস প্রায় একই। তাদের আয়ের সিংহভাগই সম্প্রচার স্বত্ব থেকে আসে। এছাড়া রয়েছে বিপণন স্বত্ব, টিকিট বিক্রি, টুর্নামেন্ট আয়োজন, সনদ স্বত্ব। দীর্ঘ মেয়াদে নিজেদের আয়ের হিসাব করে থাকে ফিফা ও আইসিসি। তবে জনপ্রিয়তার দিক থেকে ফুটবল সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকায় ফিফা বিশ্বকাপের বছরকে ঘিরে আয়ের হিসাব তৈরি করে থাকে। তারা ২০২২ বিশ্বকাপের মাধ্যমে চার বছরের হিসাব সম্পন্ন করেছে।
ফিফা কাউন্সিলে ২০২২ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯-২২ চক্রে ফিফা ৭৫৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে টেলিভিশন সম্প্রচার স্বত্ব বাবদ আয় হয়েছে ৩৪২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। চার বছরের মধ্যে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৫ বিলিয়ন দর্শক ফুটবল দেখেছেন, যা বিশ্বের জনসংখ্যারও অর্ধেকের বেশি। সম্প্রচার স্বত্বের বাইরে অ্যাডিডাস, কোকাকোলা, হুন্দাই, কিয়া, কাতার এয়ারওয়েজ, ভিসার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিপণন খাতে এসেছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়।
ফিফার প্রতিবেদন বলছে, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে আয়ে ভাটা পড়লেও কাতার বিশ্বকাপের কারণে আয়ের অঙ্কে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, যা সংস্থাটিকে ২০১৫-১৮ চক্রের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি আয় এনে দিয়েছে। ফিফার দেওয়া হিসাবটি চার বছরের। ভাগ করলে প্রতিবছর তাদের ১৮৯ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার আয় দাঁড়ায়।
অন্যদিকে, আইসিসি বর্তমানে আট বছরের চক্রে আছে, যা শেষ হবে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে ২০২৪ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত পরবর্তী চার বছরের আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে। ২০২২ সালে মোট ৪৩ কোটি ১৯ লাখ মার্কিন ডলার আয় করেছে আইসিসি। গত ৩১ ডিসেম্বর আইসিসির ওয়েবসাইটে প্রাথমিক বার্ষিক আর্থিক বিবরণীতে এই তথ্য জানানো হয়।
গত বছরের মোট আয়ের মধ্যে ইভেন্টস থেকে ৪১ কোটি ৩৯ লাখ মার্কিন ডলার অর্জন করেছে ক্রিকেট সংস্থাটি। বর্তমানে একটি চক্র চলমান থাকায় আইসিসির গড় বার্ষিক আয়ের হিসাব এখনই পাওয়া যাচ্ছে না। তবে চক্রের মধ্যে চলা সবকটি বিশ্বকাপের আয় যোগ হলে সেটি বাড়ারই কথা। যদিও ফিফার ১৮৯ কোটির তুলনায় তা চার ভাগের এক ভাগেরও কম।
২০২৪ থেকে পরবর্তী চার বছর গড়ে ৬০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করার পরিকল্পনা রয়েছে আইসিসির। তবে আগামীতে ফিফা বছরপ্রতি ২৭৭ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি আয়ের আশা করছে।