তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ জানতে চেয়েছেন, বিএনপির আন্দোলন কোন ঈদের পরে। বুধবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নবনির্বাচিত পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।
প্রধান তথ্য অফিসার মো. শাহেনুর মিয়া, ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব আলোচনায় অংশ নেন।
ঈদের পর বিএনপি অন্যান্য দলকে নিয়ে আন্দোলনে নামবে। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তাদের আন্দোলন কোন ঈদের পরে? আমরা গত ১২-১৩ বছর ধরে ঈদের পরে, রোজার পরে, বার্ষিক পরীক্ষার পরে, শীতের পরে, বর্ষার পরে তাদের আন্দোলন হবে এ রকম শুনে আসছি। তাই কোন ঈদের পরে সেটি একটু খোলসা করলে ভালো হয়।’
বিএনপি মহাসচিবের সাম্প্রতিক মন্তব্য ‘আওয়ামী লীগ দেশ ও গণতন্ত্রের শত্রু ও পাকিস্তানের পক্ষের দল এবং জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক’ এ নিয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলে ড. হাছান বলেন, ‘যাদের জন্মটা অগণতান্ত্রিকভাবে, ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে রাজনীতির কাকদের সমন্বয় ঘটিয়ে যে দলের জন্ম, সেই দলের নেতা যখন গণতন্ত্রের কথা বলে মানুষ হাসে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে ১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল যে সরকার গঠিত হয়েছিল, জিয়াউর রহমান সেই সরকারের ৪০০ টাকা বেতনের চাকুরে ছিলেন এবং নিয়মিত বেতন গ্রহণ করেছেন।’
‘বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা জিয়াউর রহমান পাঠ করেছেন, জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক নন’ উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা বহুজন পাঠ করেছেন। ২৬ মার্চ প্রথম ঘোষণা পাঠ করেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান, জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। স্কুলের দপ্তরিকে যারা হেডমাস্টার বানাতে চায় তাদের নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। দপ্তরি ঘণ্টা বাজায় কিন্তু স্কুল কখন ছুটি হবে সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে হেডমাস্টার। সুতরাং দপ্তরিকে হেডমাস্টার বানানোর চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই।’
মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু তারাই নন, ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম শহরে যখন বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি বাহিনীর তাণ্ডব-হত্যাকাণ্ড চলছে, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ অফিসের দপ্তরি নূরুল হক নিজের জীবন বাজি রেখে মাইকিং করে সমস্ত চট্টগ্রাম শহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করে শুনিয়েছেন। অপরদিকে জিয়াউর রহমান চার দেয়ালের মধ্যে প্রহরী পরিবেষ্টিত অবস্থায় ২৭ মার্চ ঘোষণা পাঠ করেছেন। স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করার জন্য যদি বাহবা দিতে হয় তাহলে নূরুল হক অনেক বেশি বাহবা পাওয়ার যোগ্য। নূরুল হকের ভূমিকা অনেক বেশি সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
‘আর ক’দিন আগে পাকিস্তানের গণতন্ত্রের উদাহরণ দিয়ে মির্জা ফখরুল সাহেবরা বেকায়দা পড়ে গেছেন, তাদের পাকিস্তানপ্রীতি ক’দিন আগে উন্মোচিত হয়েছে, সেকারণে তারা উল্টো কথা বলছেন’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
এর আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে ডিআরইউতে সব মত এবং পথের সাংবাদিকদের একসঙ্গে কাজ করার প্রশংসা করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। গণমাধ্যমকর্মী আইনের খসড়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আইনের খসড়া সংসদীয় কমিটিতে গেছে এবং সংসদীয় কমিটি সেটি পরিবর্তন, পরিমার্জন এমনকি ফেরত পাঠানো -সবই করতে পারে, সেই ক্ষমতা কমিটির আছে। সেই সাথে আমি জানিয়েছি এটি পরিবর্তন-পরিমার্জন করার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। সুতরাং সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তবে সবাই শুধু সেখানে অসংগতির কথাগুলো বলছে, ভালো দিকগুলো নিয়ে কেউ আলোচনা করছে না।’
ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু তার বক্তব্যে সাংবাদিকতার উৎকর্ষের জন্য প্রতিবছর জাতীয় বাজেটে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির জন্য ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের দাবি উত্থাপন করেন। সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব সংগঠনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। তথ্যমন্ত্রী তাদের উত্থাপিত বিষয়গুলো বিধি অনুসারে বিবেচনায় নেওয়ার আশ্বাস দেন।