সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রায় ১১ মাস পর এ নিয়ে তহবিল ব্যবস্থাপনা বিধিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার। এর মধ্যে তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটি, কমিটির কার্যাবলী ও তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে।
১৬ জুলাই অর্থমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দিলরুবা শাহিনা সই করা এক প্রজ্ঞাপন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিধিমালার ৬ ধারায় তহবিলের অর্থ কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করা যাবে সে বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সরকারি ট্রেজারি বন্ড ও বিলসহ সুকুক এবং পুঁজি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদিত মিউচুয়াল ফান্ডের মতো সিকিউরিটিজে এই অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। এছাড়া ডাবল-এ র্যাংকিংয়ে থাকা ব্যাংকগুলোর স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করা হবে।
পাশাপাশি তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির বন্ড ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সরকার বা কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা সিকিউরিটিজেও পেনশনের অর্থ বিনিয়োগ করা হতে পারে।
এই অর্থ বেসরকারি খাতের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা যাবে না। একইসঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশের বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ নেই।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, যে কোনো খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ মোট তহবিলের ২৫ শতাংশের কম হতে হবে। তবে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই ঊর্ধ্বসীমা প্রযোজ্য নয়।
এজন্য একটি অর্থ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হবে। যা বিধিমালা ৩ ধারায় বলা হয়েছে। বিধি অনুসারে, এই কমিটির সভাপতি হবেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের একজন সদস্য। এছাড়া কমিটিতে পেনশন কর্তৃপক্ষের আরও একজন সদস্য থাকবেন। একইসঙ্গে এই কমিটিতে অর্থ বিভাগের দুজন প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, অন্তত যুগ্ম সচিব পর্যায়ের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অথবা বিভাগ থেকে নির্বাচিত একজন অধ্যাপক, বিএসইসি থেকে অন্তত পরিচালক পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি এই কমিটিতে থাকবেন।
পেনশন কর্তৃপক্ষের অর্থ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কমিটির সদস্য সচিব হবেন। কমিটি প্রয়োজনে যে কোনো ব্যক্তিকে যোগ করতে পারবে বা আমন্ত্রণ জানাতে পারবে। তবে আমন্ত্রিত ব্যক্তি কেবল তাদের মতামত বা বিশ্লেষণ উপস্থাপন করতে পারবেন। তাদের কোনো ভোটাধিকার থাকবে না।
কমিটি সিকিউরিটিজের সম্ভাব্য মুনাফা ও ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগের সুপারিশ করবে। তারা অর্থ ব্যবস্থাপককে কম ঝুঁকিপূর্ণ, মুনাফা করা সম্ভব এমন খাতে বিনিয়োগের পরামর্শ দেবে। একইসঙ্গে এই কমিটি যেকোনো ব্যবসা, অর্থ ও বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়েও পরামর্শ দেবে বলে বিধিমালায় বলা হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্যানুসারে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে- প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা’য় বর্তমানে মোট নিবন্ধনকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ এবং মোট জমার পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ইতোমধ্যে জমাকৃত অর্থের মধ্যে ৯২ কেটি ৬৮ লাখ টাকা সরকারী ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রবাস স্কিম, প্রগতি স্কিম, সুরক্ষা স্কিম এবং সমতা স্কিম- এ চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে সরকার। চালুর প্রথম দিন থেকেই সাড়া মিলছে, ক্রমাগত যা ঊর্ধ্বমুখী। পেনশন বিধিমালা বলছে, সর্বজনীন পেনশন প্রথায় যার যত টাকা জমা, মেয়াদ শেষে তার তত বেশি পেনশন।
অন্যদিকে, স্বল্প আয়ের মানুষদেরও বিমুখ করবে না এ উদ্যোগ। যারা মাসিক ৫০০ টাকা জমাবেন, তাদের জন্য শুরু থেকেই থাকবে সরকারের আরও ৫০০ টাকার ভর্তুকি। সবমিলিয়ে, সবার জন্যই থাকছে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে বাড়তি কয়েকগুণ মুনাফা।
আর পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত হিসাবে ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর। ২০২৫ সালের জুলাই বা তার পরবর্তী সময়ে যারা স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগদান করবেন তাদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ঢোকা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। তারা সবাই ‘প্রত্যয়’ স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ কর্তৃক ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ পাস করা হয়। সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) ওই বছরের ১৭ আগস্ট সকালে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপরই সবার জন্য সার্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উন্মুক্ত করা হয়।
উদ্বোধনের পর জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট- www.upension.gov.bd চালু করা হয়েছে এবং চারটি স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংকে টাকা দেওয়া শুরু হয়।