সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে সারাদেশে সড়ক–মহাসড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার (৭ জুলাই) বিকেলে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামের এই কর্মসূচি পালন করবে তারা। একই সঙ্গে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হবে।
এর আগে গতকাল শনিবার পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এদিন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে শাহবাগ মোড় প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন— কোটা বাতিলের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন না তারা।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রংপুর ও কুষ্টিয়ায় মহাসড়ক এবং ঢাকার তাঁতীবাজার মোড় ও খুলনায় সড়ক অবরোধ করেন তারা।
এ সময় কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা নাহিদ বলেন, রোববার বিকেল ৩টা থেকে সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করা হলো। সেই সঙ্গে নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে।
নতুন এই কর্মসূচির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, শুধু শাহবাগ মোড় নয়, ঢাকা শহরের সায়েন্সল্যাব, চানখারপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিল প্রতিটি পয়েন্টে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমে আসবেন। ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা তারা জেলায়-জেলায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মহাসড়কগুলো অবরোধ করবেন।
‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ। নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সরকার ভেবেছে আমরা একদিন দুইদিন আন্দোলন করব এবং একদিন ক্লান্ত হয়ে যাব। আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের যদি বাধ্য করা হয় আমরা প্রয়োজনে সারাদেশে হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। আজকের ছাত্র সমাজকে আদালতের মুখোমুখি করা হচ্ছে, এ দায় নির্বাহী বিভাগ এড়াতে পারে না।’
এ সময় হলে হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধাদানের কারণে ছাত্রলীগের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নাহিদ বলেন, ‘আমরা কিন্তু হলের তালা ভাঙতে জানি। আমরা নির্বাহী বিভাগের কাছে জানতে চাই, ২০১৮ সালের পরিপত্র কেন বাতিল করা হলো? শিক্ষকদের আন্দোলন হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে, আমাদের আন্দোলন বন্ধ হবে না। ইতোমধ্যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’— ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
ঢাবির বিভিন্ন হল থেকে আলাদা ব্যানারে মিছিল নিয়ে কোটা আন্দোলনে যোগ দেন তারা। বিভাগের ব্যানারেও মিছিল নিয়ে আন্দোলনে শামিল হন শিক্ষার্থীরা। যদিও বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্রলীগের বাধা প্রদানের খবর পাওয়া গেছে। ঠিক যেই সময় কোটা আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি দিয়েছে, একই সময়ে বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগেরও প্রোগ্রাম রাখা হয়।
২০১৮ সালের অক্টোবরে কোটাবিরোধী আন্দোলন চরম আকার ধারণ করলে সরকার পরিপত্র জারি করে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দেয়। ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুন পরিপত্রটি বাতিল করে দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এরপর আবারো ক্যাম্পাসগুলোতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। শনিবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা।