রাশিয়ার চলমান এই আগ্রাসন কবে নাগাদ শেষ হতে পারে তারও স্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত নেই। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশে রাশিয়ার আগ্রাসন মাত্র শুরু এবং (ইউক্রেনের পর) অন্যান্য দেশগুলোকেও দখল করার পরিকল্পনা রয়েছে মস্কোর।
মূলত রাশিয়া ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে রুশ সামরিক বাহিনীর একজন শীর্ষ জেনারেল মন্তব্য করার পর একথা বলেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। শনিবার (২৩ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২২ এপ্রিল) গভীর রাতে ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের মতো যেসব জাতি মৃত্যুর চেয়ে জীবনের জয়ে বিশ্বাসী, তাদের অবশ্যই আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। তাদের অবশ্যই আমাদের সাহায্য করতে হবে, কারণ আমরা (রুশ হামলার) লাইনে প্রথম। এবং পরবর্তী টার্গেট কে?’
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থাগুলো জানিয়েছে, রুশ সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল মিলিটারি ডিস্ট্রিক্টের ডেপুটি কমান্ডার মেজর জেনারেল রুস্তম মিনেকায়েভ বলেছেন, দক্ষিণ ইউক্রেনের ওপর মস্কোর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাশিয়াকে ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলে প্রবেশাধিকার দেবে। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী মলদোভার ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলটি মূলত একটি রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকা।
সেভারডলভস্ক অঞ্চলে একটি সামরিক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সময় জেনারেল রুস্তম মিনেকায়েভ দাবি করেন, ‘ট্রান্সনিস্ট্রিয়ায় যাওয়ার আরেকটি উপায় হচ্ছে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। কারণ ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলে রুশ-ভাষী জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে।’
রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর এই ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা সমগ্র উপকূল রেখা থেকে ইউক্রেনকে বিচ্ছিন্ন করবে এবং বর্তমান লাইনের বাইরেও ইউক্রেনীয় বাহিনীকে শত শত মাইল পশ্চিমে ঠেলে দেবে রুশ বাহিনী।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জেনারেল মিনেকায়েভের এই মন্তব্যকে রুশ ‘সাম্রাজ্যবাদ’ বলে আখ্যায়িত করে নিন্দা জানিয়েছে। পরে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জেনারেল মিনেকায়েভের বক্তব্যে এটিই স্পষ্ট যে, রাশিয়া এখন আর নিজের উদ্দেশ্য গোপন করছে না।
শুক্রবার রাতে দেওয়া ভিডিওবার্তায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, রুশ জেনারেলের এই বক্তব্যে এটিই বোঝা যায় যে, রাশিয়া অন্যান্য দেশে আক্রমণ করতে চায় এবং ইউক্রেনের ওপর তাদের আক্রমণ তো কেবল শুরু।
তার দাবি, ‘আমি এতোদিন যা বলে এসেছি, রুশ জেনারেলের বক্তব্যে ঠিক সেটিই উঠে এসেছে যে, ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসন ছিল কেবল একটি সূচনা, এরপরে তারা অন্যান্য দেশগুলোকেও দখল করতে চায়।’
জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ান ফেডারেশনের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে চূর্ণ করতে যতক্ষণ প্রয়োজন আমরা অবশ্যই নিজেদের রক্ষা করে যাবো। কিন্তু আমাদের মতো যেসব জাতি মৃত্যুর চেয়ে জীবনের জয়ে বিশ্বাসী, তাদের অবশ্যই আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। তাদের আমাদের সাহায্য করতে হবে, কারণ আমরা এই পথে প্রথম। এবং (রাশিয়ার) পরবর্তী টার্গেট কে?’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো কিছু না হারানোর ভয়ে যারা আজ নিরপেক্ষ থাকতে চায়, তাদের কেউই হয়তো রাশিয়ার পরবর্তী টার্গেট হতে পারে। এটি (নিরপেক্ষ থাকতে চাওয়া দেশগুলোর এখনকার মনোভাব) সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাজি। কারণ তারা সব হারাবে।’