বরিশালের বাকেরগঞ্জে ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুর বিরুদ্ধে করা মামলার ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) চার পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মহাপরিদর্শককে (আইজি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে চার শিশুকে আটকের আদেশ দেওয়া বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি ক্ষমতা প্রত্যাহার এবং সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া সারা দেশের পুলিশের কাছে শিশু আইন বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা প্রজ্ঞাপন আকারে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বরিশালের বাকেরগঞ্জে ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা চার শিশুর বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ শিশুদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম ও এ এম জামিউল হক ফয়সাল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। আইনজীবী এ এম জামিউল হক ফয়সাল সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গত বছরের ৪ অক্টোবর বরিশালের বাকেরগঞ্জে ছয় বছরের এক কন্যাশিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে ৬ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় শিশুটির খেলার সঙ্গী চার শিশুকে আসামি করা হয়।
মামলার পর ওই চার শিশুকে গ্রেপ্তার করে বাকেরগঞ্জ থানার পুলিশ। পরে বিকেলে তাদের আদালতে হাজির করা হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েতউল্লাহ ওই চার শিশুকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সন্ধ্যায় ওই শিশুদের পুলিশ প্রিজনভ্যানে সেখানে পাঠানো হয়।
এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে এটি উচ্চ আদালতের চোখে পড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে চার শিশুকে মা-বাবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে ৯ অক্টোবর হাইকোর্টের নির্দেশে বরিশালের শিশু আদালতের বিচারক আবু শামীম আজাদ আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন শিশুদের তাদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেয়।
এ ঘটনায় হাইকোর্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েতউল্লাহকে তলব করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েতউল্লাহ ১১ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
ওই চার শিশুর স্বজনদের দাবি, মামলায় এসব শিশুর বয়স ১০ থেকে ১১ বছর উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের বয়স আট থেকে নয় বছরের মধ্যে। ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মূলত জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে।