বরিশালের রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ১০ শিক্ষার্থীকে ৯ প্রতিষ্ঠানে বদলি করা হয়েছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ সাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। নোটিশে ১০ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে বদলিকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো লেখা হয়। সেই সঙ্গে ২৪ নভেম্বর বর্তমান প্রতিষ্ঠান থেকে অবমুক্ত হয়ে বদলিকৃত প্রতিষ্ঠানে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় ২৬ নভেম্বরের পূর্বাহ্ণে বর্তমান প্রতিষ্ঠান থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত বলে গণ্য হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে নোটিশে বলা হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক প্রশাসক উইং এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে ওই ১০ শিক্ষার্থীকে প্রশাসনিক কারণে এ বদলি করা হয়েছে। যদিও খামার বাড়ির সূত্র বলছে, উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীরা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর শিক্ষার্থীরা বলছে, অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং আন্দোলন করায় তাদের শাস্তিস্বরূপ এ বদলি করা হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়বস্তুর ওপর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে, উল্টো শিক্ষার্থীদের এভাবে শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করাকে তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। বদলি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সিয়াম সরদার রংপুরে, আরি্ফুল ইসলাম গাইবান্ধায়, মো. ইব্রাহিম ঝিনাইদহে, জাহিদ হাসান অন্তিম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, জাবেদুর রহমান মাহি সিলেটে, তাসনিম জাহান শেহতাজ কুমিল্লা, নাজমুল হাসান ঝিনাইদহে, মারিয়া তুন ইভাকে শেরপুরে, মোজাম্মেল হককে গাজীপুর ও সজীব মিস্ত্রীকে রাঙামাটিতে স্ট্যান্ডে রিলিজ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী সিয়াম সরদার বলেন, রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও তাকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলাম আমরা। এক পর্যায়ে খামারবাড়ির কর্মকর্তারা, ইউএনও এসে আমাদের আশ্বাস দিলে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করি। এরপর অধ্যক্ষের অনিয়ম তদন্তে ৮ নভেম্বর ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার। তবে হঠাৎ করে আমরা যারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছি তাদের বদলি করা হয়েছে অনৈতিক ভাবে। কিন্তু যার অনিয়ম তদন্তে কমিটি করা হয়েছে সেই দুর্নীতিবাজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বহাল তবিয়তে রয়েছেন, অথচ তিনি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এক যুদ্ধাপরাধীর ভাগ্নে। ২১ তারিখ চিঠি সই হলেও আমরা জানতে পেরেছি ২৪ তারিখ। আবার ২৬ তারিখের মধ্যে ইন্সটিটিউটে যোগ দিতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ যারা আন্দোলন করেছে তাদের শায়েস্তা করা হচ্ছে। আমাদের ১০ জনের মধ্যে ছাত্রলীগের কর্মীও রয়েছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতি করায় আমাদের উপর ক্ষিপ্ত ছিলো যুদ্ধাপরাধীর ভাগ্নে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
এসব বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, মন্ত্রণালয় তদন্ত করে ওদের স্ট্যান্ড রিলিজ দিয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকা কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ মকবুল আহম্মেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি ফোনে কোনো কথা বলতে পারবো না। কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেই অনুযায়ী ওদের বদলি করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরিশালে অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের বদলিজনিত কোনো সিদ্ধান্ত দিইনি। ডিজি মহোদয়ের অফিস এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।
এ বিষয়ে খামার বাড়ি ঢাকার পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ও মহাপরিচালকের স্টাফ অফিসার শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বরিশালে আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধের পর উচ্ছৃঙ্খলাপনা করে সরকারের ক্ষতি করেছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড এই শিক্ষার্থীদের বদলি করেছে।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার, তদন্ত কমিটি গঠনকারী ও তদন্ত কমিটির সদস্য মোসাম্মৎ মরিয়ম সাংবাদিকদের জানান, তারা শিক্ষার্থীদের বদলির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি, কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি সম্পর্কে জানেন। তবে শুধু যে শিক্ষার্থীদের বদলি করা হয়েছে তা নয় জানিয়ে তিনি বলেন, দুজন উপ-সহকারী পরিচালককেও বদলি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।