গত সাড়ে তিন মাস আগে কুষ্টিয়ার সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেলকে (৩১) পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো নিহত রুবেলকে গ্রেপ্তার করতে গতকাল তার বাড়িতে গিয়েছিল পুলিশ। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রুবেলের পরিবার ও সাংবাদিক সমাজ।
শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুষ্টিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাউজিং এ ব্লক এলাকার এ/৩৯ নম্বর রুবেলের বাড়িতে যান মিলপাড়া ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আসাদুল ইসলাম।
রুবেলের মা ফিরোজা আক্তার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, শনিবার দুপুরে পুলিশ আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার করতে এসেছিল। তিন মাস ১৬ দিন আগে আমার ছেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ। উল্টো আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার করতে এসেছিল পুলিশ। ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক।
সাংবাদিক রুবেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার বাদী ও রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান মেজর ঢাকা পোস্টকে বলেন, রুবেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তার ওপরে মৃত রুবেলের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে শনিবার দুপুরে এসআই আসাদ ও শফি রুবেলের বাড়িতে যায়। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। এ ঘটনায় আমি চরম হতাশ। পুলিশকে রুবেলের মৃত্যু সনদ দেখানো হলে তারা চলে যায়।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) কুষ্টিয়ার সভাপতি হাজী রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাংবাদিক রুবেল হত্যাকাণ্ডের রহস্য এখনো উন্মোচন করতে পারেনি পুলিশ এবং উল্লেখযোগ্য আসামিও গ্রেপ্তার হয়নি। অথচ নিহত রুবেলের বাড়িতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ওয়ারেন্ট নিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করতে গেছে পুলিশ। এটি সাংবাদিকদের জন্য মানহানিকর ও লজ্জাজনক ঘটনা। এ ঘটনায় তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে সাংবাদিক রুবেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, একটি মামলায় রুবেলের নামে গ্রেপ্তাতারি পরোয়ানা হয়েছে। এজন্য তার বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জেনে একটু পরে আপনাকে জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে এএসআই আসাদুল ইসলাম আসাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসিবুর রহমান রুবেলের নামে চেক সংক্রান্ত একটি মামলায় (এনআইডি এক্টের ১৩৮ ধারায়) ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে। আদালতের সিআর ৩১০/২২ নম্বরের ওয়ারেন্ট তার নামে ইস্যু হয়। এটি হাতে পাওয়ার পর রুবেলের বাসায় গিয়ে জানতে পারি তিনি মারা গেছেন। এরপর তার মৃত্যু সনদ নিয়ে আদালতে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। আর কোনো সমস্যা নেই। তার বাড়ি আর যাওয়া লাগবে না।
প্রসঙ্গত, নিখোঁজের ৫ দিন পর গত ৭ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কুমারখালী পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের তেবাড়িয়া গ্রামের গোলাম কিবরিয়া ব্রিজের (নির্মাণাধীন) নিচে গড়াই নদী থেকে হাসিবুর রহমান রুবেলের (৩১) অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পর দিন শুক্রবার (৮ জুলাই) ময়নাতদন্ত শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌর গোরস্থানে জানাজা শেষে নিহত সাংবাদিক রুবেলের দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এর আগে ৩ জুলাই রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড়ে তার পত্রিকা অফিসে অবস্থান করছিলেন। এসময় মোবাইলে একটি কল এলে তিনি অফিস পিয়নকে ‘বাইরে থেকে আসছি’ বলে বের হন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। পরে নিখোঁজের ৫ দিন পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় গত ৮ জুলাই শুক্রবার রাতে কুমারখালী থানায় রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান মেজর বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
হাসিবুর হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার কার্যালয় ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন কুষ্টিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা।
নিহত রুবেল কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এ ব্লক এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে।