কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বিকেলে আমিরুল ইসলাম (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
হামলা-মামলার ভয়ে আসবাবপত্র ও গবাদিপশু নিয়ে এলাকা ছাড়ছেন মানুষ। তারা গ্রাম ছাড়ার ফলে চাপড়া ইউনিয়নের ৩৭ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় আমিরুল ইসলাম নামে একজন নিহত হন। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েত রয়েছে। অন্যদিকে হামলা-মামলা ও ভাঙচুরের ভয়ে গ্রাম ছাড়ছে এলাকাবাসী।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার, সমাজপতিদের দলাদলি ও উসকানিতে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে নেহেদ আলী (৬৫) ও বকুল আলী (৫৫) নামে আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পরদিন নেহেদ আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে ১ এপ্রিল ২৮ জনকে আসামি করে কুমারখালী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে যায় অর্ধশতাধিক পরিবার। ওই ঘটনা এবং এবারের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই মঙ্গলবার আমিরুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা দেড়টায় বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে শুনশান পরিবেশ। ৬ জন শিক্ষক স্কুলের বারান্দায় বসে আছেন। আর একজন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন। পঞ্চম শ্রেণির কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী। একজন শিক্ষক তাদের ইংরেজি পড়াচ্ছেন। আর ব্লাকবোর্ডে লেখা রয়েছে উপস্থিত শিক্ষার্থী ২ জন এবং অনুপস্থিত ২৫ জন।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫৫ জন। বিপরীতে শিক্ষক রয়েছে সাতজন। প্রতিদিন দেড়টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান। আর বুধবার সকালে ছিল চতুর্থ শ্রেণির পাঠদান। এদিন পঞ্চম শ্রেণিতে ২৭ জনের মধ্যে মাত্র ২ জন এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ৩২ জনের মধ্যে মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তামান্না ইয়াসমিন বলেন, এলাকায় দুপক্ষের সংঘর্ষ চলছে। ভাঙচুর, হামলা-মামলাও চলছে। একজন খুন হয়েছে। তাই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আসেনি। শিক্ষকরা চাকরি বাঁচাতে প্রাণহাতে নিয়ে বসে আছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাহাড়পুর গ্রামে লস্কর ও মণ্ডল গ্রুপের সংঘর্ষ চলে আসছে। মঙ্গলবার বিকেলে পাহাড়পুর গ্রামের সাজ্জাত হোসেনের ছেলে আমিরুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যার পর থেকে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংঘর্ষে গত পাঁচ বছরে সাতজন নিহত হয়েছে। সংঘর্ষে এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। চলে হামলা-মামলা। এ সবের ভয়ে ঘরের আসবাবপত্র, গবাদিপশুসহ সকল জিনিসপত্র নিরাপদ স্থান সরিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ জনগণ।
সরেজমিন পাহাড়পুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভ্যান ও বিভিন্ন যানবাহন করে গরু, ছাগল, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে। পুরুষশূন্য এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছে নারী ও শিশুরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মানুষ বলেন, আমরা কোনো দল করি না। প্রায়ই গ্রামে মারামারি হয়। ভয়ে ঘরের আসবাবপত্র, গবাদিপশু আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে সরিয়ে ফেলি। এবারও তাই করছি।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যা, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।