পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় ইকবাল হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এরইমধ্যে সবার মনে প্রশ্ন জেগেছে—কে এই ইকবাল?
কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্কর পুকুর এলাকার নূর আহমদ আলমের ছেলে ইকবাল। তার বাবা মাছের ব্যবসা করেন। পুলিশের একাধিক সংস্থার তদন্তে এবং সিটিটিভির ফুটেজ দেখে ইকবালকে শনাক্ত করা হয়। ইকবালের মা বিবি আমেনা বেগম জানান, তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। ইকবাল সবার বড়। ইকবাল ১৫ বছর বয়স থেকেই মাদক সেবন শুরু করে।
১০ বছর আগে বরুড়া উপজেলায় বিয়ে করেছেন ইকবাল। তার এক ছেলে। বিয়ের পাঁচ বছর পর স্ত্রীর সঙ্গে ইকবালের ডিভোর্স হয়। তারপর চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়াবাজার এলাকার কাদৈর গ্রামে বিয়ে করেন। এই সংসারে এক ছেলে এক মেয়ে। ইকবালের স্ত্রী-সন্তান এখন কাদৈর গ্রামে থাকেন। ইকবাল নেশাগ্রস্ত হয়ে নানাভাবে পরিবারের সদস্যদের অত্যাচার করতো। বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটে মানুষকে হয়রানি করতো। গোসলখানায় দরজা বন্ধ করে ইয়াবা সেবন করতো। ইকবাল মাজারে মাজারে থাকতো। বিভিন্ন সময় আখাউড়া মাজারে যেতো। কুমিল্লার বিভিন্ন মাজারেও তার যাতায়াত ছিল। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে।
১০ বছর আগে বন্ধুদের সঙ্গে পাড়ার কিছু ছেলের মারামারি হয়। এ সময় ইকবালের পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়। তখন থেকে ইকবাল অসুস্থ। উল্টাপাল্টা চলাফেরা করায় বিভিন্ন সময় চোরের অপবাদ দিয়ে তাকে স্থানীয়রা মারধর করতো। পরে তারাই আক্ষেপ করতো। ভালো ক্রিকেটও খেলতে পারতো ইকবাল। কয়েক দিন আগে কাউন্সিলরের কাছ থেকে শুনেছি, ইকবাল পূজামণ্ডপ থেকে হনুমানের গদা নিয়ে আসে। এরপর থেকে এলাকায় তাকে নিয়ে চলছে আলোচনা।
ইকবালের ছোট ভাই রায়হান বলেন, ইকবালকে খুঁজতে পুলিশের সঙ্গে গত শুক্রবার থেকেই আছি। ইকবাল ভালো কোরআন তিলাওয়াত করতে পারেন। তার ভাই যদি অন্যায় করে থাকেন, যদি তা সত্য হয়, তাহলে তার শাস্তি হোক। তবে ইকবাল কারও প্ররোচনায় এমন কাজ করতে পারেন।
ইকবালের নানি রহিমা বেগম জানান, ১৩ দিন আগে ঘর থেকে ইকবালকে বের করে দিয়েছি। ব্লেড দিয়ে পাঁচটি হাঁস জবাই করেছে। ইকবালের অত্যাচারে আমি অতিষ্ঠ।
১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেল বলেন, ১০ বছর ধরে ইকবালকে চিনি। প্রায় সময় আমার কার্যালয়ের আশপাশেই থাকে। রঙমিস্ত্রির কাজ করতো। মাঝে মধ্যে নির্মাণ শ্রমিকের কাজও করতো। ইয়াবা সেবন করে। ইকবালকে নিয়ে অনেকেই অভিযোগ দিতো। তার কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। তবে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। কোনও দলের কর্মী কিংবা সমর্থকও নয়। কয়েক বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল। বিয়ের পর স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। আমার মনে হয়, তার মানসিক অসুস্থতাকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় পক্ষ কাজটি করেছে। পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ঘৃণা প্রকাশ করছে। তবে ওই ঘটনার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নিশ্চিত করে ইকবাল হোসেনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘পুলিশের একাধিক সংস্থার তদন্তে এবং সিটিটিভির ফুটেজ দেখে ইকবালকে শনাক্ত করা হয়। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
নানুয়াদিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়া যায়। এরপরই দেশের কয়েক স্থানে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার জেরে ওই দিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দুদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচ জন নিহত হয়।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হিন্দুদের মন্দির, মণ্ডপ ও দোকানপাটে হামলা–ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানে হামলায় দুই জন নিহত হন। এরপর রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু বসতিতে হামলা করে ভাঙচুর, লুটপাট ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এরইমধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।