নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে আবুল কালাম (৪৫) নামের এক দরিদ্র অটোচালককে চুরি করার অপবাদে মারধর করেছে মালিকপক্ষ। এতে চুরি ও মারধরের অপবাদ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন অটোচালক আবুল কালাম।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলার ঘোড়াশাল উত্তর মিয়া পাড়া গ্রামের কবরস্থানের পাশের একটি ব্যাটারি চার্জের ঘর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আবুল কালামের দেশের বাড়ি ময়মনসিংহে। তিনি ঘোড়াশাল পৌর এলাকার আটিয়াগাঁও গ্রামে ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন।
নিহতের স্ত্রী আমেনার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, আবুল কালাম ঘোড়াশাল পৌর এলাকার উত্তর মিয়া পাড়ার গ্রামের জাহাঙ্গীরের (২৫) কাছ থেকে অটো ভাড়া নিয়ে চালাতেন। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘোড়াশাল থেকে যাত্রী নিয়ে নরসিংদী সদরের পাঁচদোনা হয়ে শিলমান্দি এলাকায় গেলে তার অটোরিকশাটি চুরি হয়ে যায়। পরে কালাম চুরির হওয়ার বিষয়ে তার মালিক জাহাঙ্গীরকে জানায়। কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে চালকের যোগসাজেস অথবা অটোরিকশাটি সে বিক্রি করে দিতে পারে এমন সন্দেহে দুপুরে তাকে উত্তর মিয়ার পাড়া এলাকার ব্যাটারি চার্জের একটি ঘরে আটকে রাখে মালিক জাহাঙ্গীর। পরে তাকে মারধর করে টাকা দাবি করে। খবর পেয়ে অটোচালকের স্ত্রী আসার পর তার সঙ্গেও টাকার জন্য দুর্ব্যবহার করে মালিক জাহাঙ্গীর।
অটোচালক আবুল কালামের স্ত্রী বলেন, আমি মালিক জাহাঙ্গীরকে অনুরোধ করি আমার স্বামীকে ছেড়ে দিতে। প্রয়োজনে কিস্তি তুলে আমরা আপনার টাকা পরিশোধ করবো। এই আশ্বাসেও তাকে ছাড়েনি জাহাঙ্গীর। পরে রাত ৮টার দিকে ঘরের বাইরে দরজা আটকে রেখে চলে যায় জাহাঙ্গীর।
আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী সাথী মিলে অটোচালকে দেখতে আসে। পরে তারা ঘরের দরজা খুলে দেখতে পায় কালামের মরদেহ ঝুলছে। এ অবস্থায় জাহাঙ্গীর ও অন্যান্যরা ঝুলন্ত মরদেহটি খুলে নিচে নামিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয়রা দুপুরে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে বিকেলে মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ।
অপরদিকে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জাহাঙ্গীরের বাবা নাছির উদ্দীন, মা মনোয়ারা বেগম, স্ত্রী সাথী আক্তারকে আটক করেছে পলাশ থানা পুলিশ।
পলাশ থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অটোচালকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আত্মহত্যার প্ররোচণা দেওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।