লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ঋণের টাকা পরিশোধ করেও আশা এনজিওর মামলায় কারাগারে যেতে হয় যুবলীগ নেতা শাহ নাজমুল ইসলামকে (৩৩)। এরপর কারাগারের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা ওই এনজিও অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিকেলে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান নাজমুল। পরদিন বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট থেকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।
এদিন বেলা ১১টায় আশা এনজিওর হাতীবান্ধা ব্রাঞ্চ ঘেরাও করে ফটকে তালা দেন স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
মৃত নাজমুল হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বেজগ্রাম এলাকার মৃত সোলেমান গনি ওরফে দুলালের ছেলে। নাজমুল টংভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
জানা গেছে, আশা এনজিওর হাতীবান্ধা ব্রাঞ্চ থেকে ২০১৭ সালে ১ লাখ টাকা ঋণ নেন যুবলীগ নেতা নাজমুল। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় লালমনিরহাট আদালতে তার বিরুদ্ধে ৭৭ হাজার ৫৮৩ টাকার একটি মামলা করে আশা এনজিও। মামলা চলাকালে তিনি প্রথমে আদালতের মাধ্যমে ৩৮ হাজার টাকা ও পরে আশা এনজিওর হাতীবান্ধা ব্রাঞ্চে বাকি টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু এনজিও মামলাটি তুলে নেয়নি। সেই মামলায় নাজমুল গত ২৩ জুলাই আদালতে হাজির হলে তাকে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে মঙ্গলবার উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান নাজমুল। কিন্তু ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এ বিষয়ে নাজমুলের স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, এনজিও মামলা করলে আমার স্বামী পুরো টাকা পরিশোধ করেন। এর মধ্যে ৩৮ হাজার টাকা আদালতের মাধ্যমে এবং বাকি টাকা গত ২২ জুন অফিসে জমা করা হয়। কিন্তু সেই পরিশোধিত টাকার কোনো কাগজ তারা আদালতে জমা না দেওয়ায় আদালত আমার স্বামীকে জেলে পাঠায়। এনজিও অফিসের লোকজন যদি টাকা পরিশোধের কথা আদালতে বলতো তাহলে আজকে আমি আমার স্বামীকে হারাতাম না, আর আমার সন্তানও বাবাকে হারাতো না।
নাজমুলের মা নাজমা বেগম বলেন, আমার ছেলে আশা এনজিওর মামলায় জেলে যায়। কিন্তু আমার ছেলে তো সব টাকা শোধ করেছে। তারপরেও কেন তাকে জেলে যেতে হলো?
আশা এনজিওর হাতীবান্ধা ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ফারুক হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে নাজমুল ঋণ নেন। ঋণের টাকা শোধ না করায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলায় জেলে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
ঋণ পরিশোধ করার পরেও জেলে কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আদালতের বিষয়। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
ফারুক হোসেন আরও বলেন, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। সকাল থেকে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি পুলিশ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম শাহিন বলেন, নাজমুল এনজিওর মামলায় কারাগারে ছিল, আর সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে। এনজিওর গাফিলতির কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এনজিও কর্তৃপক্ষকে এর ক্ষতি পূরণ দিতে হবে।
হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম বলেন, কারাগারে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর সেই ঘটনায় এনজিও অফিসে তালা দেওয়া হয়েছে। তবে আশা এনজিও থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।