এর আগের বছর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র কথা দেয় আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে তারা নিজ সেনাসহ সব বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহার করে নিয়ে যাবে।
তার এ সফরের মাত্র পাঁচ মাস পর বিনা বাধায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে নেয় তালেবান। তাদের পুনরায় ক্ষমতা দখলের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে ২০২৩ সালের ১৫ আগস্টে। সেনা প্রত্যাহার করার আগে ধারণা করা হয়েছিল তালেবান সহজেই ক্ষমতা দখল করতে পারবে না। এ নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যও তৈরি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান। কিন্তু তাদের সেসব তথ্য পুরোপুরি ভুল প্রমাণিত হয়। কিন্তু কেন সেসব পূর্ব ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়?
মার্কিন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা মার্ক ম্যাকেঞ্জি পাকিস্তান সফরে গিয়ে দেশটির তৎকালীন সেনাপ্রধান কামার জাবেদ বাজওয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। তাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল— মার্কিন সেনারা চলে গেলে তালেবান কতদিনের মধ্যে ক্ষমতা দখল করতে পারে।
জেনারেল ম্যাকেঞ্জি পাকিস্তানের অনুমান বা গোয়েন্দা তথ্য জানতে চেয়েছিলেন, কারণ আফগানদের সঙ্গে পাকিস্তানের ভালো সম্পর্ক ছিল এবং তারা আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ ছিল।
গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে জেনারেল বাজওয়া তখন বলেছিলেন, তালেবান হয়ত দেশের অন্যান্য অঞ্চলের দখল দ্রুত নিয়ে নেবে। কিন্তু এত সহজে রাজধানী কাবুল দখল করতে পারবে না।
কারণ হিসেবে বাজওয়া বলেছিলেন, যখন তালেবান কাবুল দখল করতে আসবে তখন আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
এমনকি বাজওয়া আরও বলেছিলেন, তার বিশ্বাস মার্কিন সেনারা চলে যাওয়ার পর কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিতে তালেবানের ১ বছর বা তারও বেশি সময় লাগবে।
তিনি ওই বৈঠকে মার্কিন জেনারেলকে বলেছিলেন, এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগানিস্তানে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনে সব পক্ষকে রাজী করতে পর্যাপ্ত সময় পাবে। পাক সেনাপ্রধানের এমন তথ্যে যুক্তরাষ্ট্র মনে করেছিল, খুব দ্রুতই কিছু হবে না।
তবে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করেন তখন দৃশ্যপট পাল্টে যায়। প্রথম অবস্থায় মার্কিন গোয়েন্দারা ধারণা করেন, সেনা প্রত্যাহারের ৯ মাসের মধ্যে তালেবানের হাতে কাবুলের পতন হবে। কিন্তু কিছুদিন বাদে সেটি তিন মাসে নামিয়ে আনা হয়।
তালেবান যখন একের পর এক প্রদেশ দখল করতে থাকে তখন নিজেদের গোয়েন্দা তথ্যে পরিবর্তন আনে মার্কিনিরা।
কিন্তু সেনা প্রত্যাহারের এক বছর, নয় মাস, তিন মাস তো দূরে থাক— যখন সব সেনাই প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়নি তখন কাবুলের উপকণ্ঠে চলে আসে তালেবান। আর সবাইকে চমকে দিয়ে আফগান সেনাবাহিনীর সব সেনা পালিয়ে যান।
প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনিও উপায়ন্তর না দেখে দ্রুত দেশ ত্যাগ করেন। এরমাধ্যমে কোনো রক্তপাত ছাড়া কাবুল দখল করে তালেবান।
কাবুলের এমন দ্রুত পতনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা তথ্যের দুর্বলতা তখন প্রখরভাবে প্রকাশ পেয়েছিল।
মূলত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে তৈরি করা সেনাবাহিনীর কোনো প্রতিরোধ না গড়া এবং প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি মার্কিনিদের সব গোয়েন্দা তথ্যকে ভুল প্রমাণ করে। এখন দুই বছর পর পুরো দেশজুড়ে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে তালেবান।