কান উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্ম হলো বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্রের বাজার। এতে আমন্ত্রণ পেলো নুহাশ হুমায়ূনের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুভিং বাংলাদেশ’। ছবিটির দুই প্রযোজক আরিফুর রহমান ও বিজন ইমতিয়াজ এই সুখবর জানিয়েছেন। ‘মুভিং বাংলাদেশ’ গত বছর ভারতের এনএফডিসি ফিল্ম বাজারের কো-প্রোডাকশন মার্কেটে নির্বাচিত হয়। কো-প্রোডাকশন মার্কেটের সেরা প্রজেক্টগুলো ফিল্ম বাজার ও কানের মধ্যকার সহযোগিতার অংশ হিসেবে মার্শে দ্যু ফিল্মে আমন্ত্রণ পায়। ‘মুভিং বাংলাদেশ’ সেভাবেই আমন্ত্রিত হয়েছে।
মার্শে দ্যু ফিল্মে সারাবিশ্ব থেকে নির্মাতারা বিক্রয়ের কৌশল প্রয়োগ করে পৃথিবীর খ্যাতনামা সিনেমা ব্যবসায়ীদের কাছে নিজেদের ছবির সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরেন। নুহাশ হুমায়ূন, আরিফুর রহমান ও বিজন একই কাজ করবেন। আশাা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে প্রযোজনা-পরিবেশনার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের ছবি। গত কয়েক বছর কানের মার্শে দ্যু ফিল্মে বাংলাদেশের যেসব ছবি অংশ নিয়েছে সেগুলো ছিলো প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া করে দেখানো প্রদর্শনী। এবারই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ছবি মার্শে দ্যু ফিল্মের কো-প্রোডাকশন ডে’র আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেলো। সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘মুভিং বাংলাদেশ’। ঢাকা শহরের তরুণ একজন উদ্যোক্তাকে কেন্দ্র করে এর গল্প। অ্যাপ তৈরি করে পরিবহনের আকার বদলে দেয় সে। পাঠাও-এর গল্পে অনুপ্রাণিত হলেও প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক বা সৃজনশীল কোনোভাবেই ছবিটির সঙ্গে যুক্ত নয়।
সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে নুহাশ বলেন, ‘সিনেমা বানাতে সময় ও পরিশ্রম লাগে। আমাদের গর্ব হবে এমন কিছু তৈরির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, ২০২২ সালের মাঝামাঝি এর কাজ শুরু করতে পারবো। এর মধ্যে এমন আমন্ত্রণ আমাদের আত্মবিশ্বাসের জন্য বিশাল উৎসাহ জোগাবে। আমাদের এই প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ ও এর বাইরেও অনেকে আস্থা রেখেছেন জেনে দারুণ লাগছে। দেশীয় সিনেমার অন্যান্য চমৎকার খবর পেয়েছেন, বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।’
প্রযোজক আরিফুর রহমান বলেন, “বুসান এশিয়ান ফিল্ম স্কুলে চলচ্চিত্র প্রযোজনা নিয়ে আমি পড়াশোনা করছিলাম, তখন নূহাশ আমাকে প্রথম গল্পটি বলেছিলো। বুসানে এশিয়ান ফিল্ম অ্যাকাডেমিতে অংশ নিতে গিয়েছিলেন নুহাশ। আর বিজন যোগ দিয়েছিলো আফগানিস্তানের সঙ্গে আমাদের যৌথ প্রযোজিত স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘রোকাইয়া’র এশিয়ান প্রিমিয়ারে। এরপর আমাদের লম্বা পথচলায় আমাদের অংশীদারিত্ব তৈরি হয়। ‘মুভিং বাংলাদেশ’-এর চিত্রনাট্য তৈরির সময় থেকেই আমি দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। গল্প লেখক ও পরিচালক হিসেবে নুহাশের আবেগ ও অনুভবশক্তি চমৎকার। তিনি যা বিশ্বাস করেন সেই গল্পটাই বলতে চান। আর প্রযোজক হিসেবে আমি বলতে পারি, ‘মুভিং বাংলাদেশ’ সারাবিশ্বকে সম্পৃক্ত করার মতো ছবি।” * ‘মুভিং বাংলাদেশ’ ছবির প্রযোজক আরিফুর রহমান
‘মুভিং বাংলাদেশ’ ছবির সঙ্গে যুক্ত আছেন ফরাসি প্রযোজক বিখ-কোয়ান থান ও তাইওয়ানিজ প্রযোজক প্যাট্রিক মাও হুয়াঙ। ফরাসি প্রযোজক বিখ-কোয়ান থান সহ-প্রযোজনা করছেন অ্যানিমেটেড ছবি ‘শারকোয়া’। এতে অভিনয় করছেন ইতালিয়ান অভিনেত্রী এশিয়া আর্জেন্টো, ইরানি অভিনেত্রী গোলশিফতাহ ফারাহানি, ফরাসি নির্মাতা গ্যাসপার নো।
অন্যদিকে ২০১৬ সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের ভেনিস ডে বিভাগে প্রদর্শিত ও ফেডেওরা অ্যাওয়ার্ড জয়ী ‘দ্য রোড টু মান্দালে’র প্রযোজক ছিলেন প্যাট্রিক। একই বছর টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের কন্টেপোরারি ওয়ার্ল্ড সিনেমা বিভাগে দেখানো হয় ছবিটি। এছাড়া ২০১৪ সালে ৬৪তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্যানোরমা বিভাগে প্রদর্শিত ‘আইস পয়জন’ ছবির সহ-প্রযোজক ছিলেন প্যাট্রিক। ৮৭তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের সেরা বিদেশি ভাষার ছবি বিভাগে তাইওয়ান থেকে জমা দেওয়া হয় এটি।