পাবনার বেড়ায় সুস্মিতা খাতুন (১৮) নামে এক কলেজছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১টার দিকে সুস্মিতার বাবা জাইদুল হোসেন বাদী হয়ে অভিযুক্ত আশিক হোসেনকে (২০) আসামি করে মামলা করেন।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন বেড়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান ।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে ঘরের দরজা ভেঙে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সুস্মিতা খাতুনের উদ্ধার করা হয়। একই দিন সকালে কলেজে যাওযার পথে পথরোধ করে আশিক হোসেন নামে এক তরুণ সুস্মিতাকে বেধরক মারধর করেন। মারধরের পরই রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে সুস্মিতা আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ সহপাঠী ও স্বজনদের।
সুস্মিতা মৈত্রবাঁধা এলাকার চায়ের দোকানি জাইদুল হোসেনের মেয়ে এবং বেড়া সরকারি কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। অভিযুক্ত আশিক হোসেন সাঁথিয়া উপজেলার সোনাতলা গ্রামের মিন্টু মিয়ার ছেলে।
জানা গেছে, আশিক বেড়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে তাঁত শ্রমিকের কাজ করেন। বছরখানেক আগে মুঠোফোন আশিকের সঙ্গে পরিচয় হয় সুস্মিতার। এরপর তাদের মাঝে চলে প্রেমের সম্পর্ক। কিছু দিন ধরে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। মঙ্গলবার সকালে কলেজে যাওয়ার পথে সুস্মিতাকে জোর করে রিকশায় তুলে অন্যত্রে নিয়ে যান আশিক। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় কলেজের সামনে নিয়ে আসেন। এ সময় সহপাঠীরা তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেন। বাড়ি পৌঁছানোর পরপরই ঘরের দরজা বন্ধ করেন দেন সুস্মিতা। পরে অনেকক্ষণ তার সাড়াশব্দ না পাওয়ায় পরিবারের লোকজন দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আশিক হোসেন ও তার পরিবার পলাতক রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুস্মিতার একাধিক সহপাঠী জানান, সুস্মিতা কিছুদিন ধরে আশিককে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। নানা সময়ে আশিককে নিয়ে ভয়ের মধ্যে থাকতো। রক্তাক্ত অবস্থায় যখন কলেজের সামনে আশিক সুস্মিতাকে নামিয়ে দিয়ে যায়, তখন সুস্মিতা জানিয়েছিল যে- আশিক তাকে বেধরক মারধর করেছে।
সাঁথিয়ার নাগডেমড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, এমন দুঃখজনক ঘটনার জন্য আমার এলাকার লোকজনও মর্মাহত। ঘটনার পর থেকে আশিকসহ তার বাড়ির সবাই পলাতক। আশিক সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, সে বখাটে প্রকৃতির।
বেড়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ঘটনাটি বেশ দুঃখজনক ও স্পর্শকাতর। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা আশিককে ধরার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তার বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু বাড়িতে কেউ নেই। তবে শিগগিরই আমরা তাকে ধরে ফেলতে পারব বলে আশা করছি।