শিল্পখাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ সুবিধা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। শনিবার (১০ এপ্রিল) ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা : অর্থবছর ২০২১-২২’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ তাগিদ দেন শিল্পখাতের নেতারা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল ২৪ যৌথভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, করোনো মোকাবিলায় সব শিল্পখাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ সুবিধা অব্যাহত থাকা প্রয়োজন, সেই সঙ্গে কুটির শিল্পের জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্স সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে বাজেটে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।
সভায় এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ। এ অবদান বাড়াতে না পারলে ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হতে পারে। করোনায় দেশের এসএমই খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজের ৬৮ শতাংশ এ খাতের উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এসএমই খাতে মোট কর্মসংস্থানের ৮০-৮৫% সুযোগ তৈরি হয়, কিন্তু করোনার কারণে এ খাতে কর্মী ছাঁটাই এবং মজুরি কমার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় ।
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ও প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, পোশাক শিল্পে সবুজ কারখানা বাংলাদেশে পৃথিবীতে আলোড়ন তৈরি করছে। তবে ইটিপি স্থাপনে প্রয়োজনীয় ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও কেমিক্যাল আমদানিতে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে যা অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য বাজেটে পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন এবং করোনো মোকাবিলায় প্রণোদনার প্যাকেজের ঋণের টাকা ফেরতের সময়সীমা বাড়ানো প্রয়োজন।
দেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ৩০০টির মত সুপারশপ রয়েছে। করোনো পরিস্থিতিতেও সুপারশপসমূহ নির্ধারিত মূল্যে পণ্য প্রদান করছে এবং অসংখ্য তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি রয়েছে। সুপার মার্কেটের পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের ফলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক সুপারশপ বন্ধ হয়ে গেছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয় বলেন, এসএমইদের ঋণ সহায়তা পেতে হলে একটি স্কিম থাকা প্রয়োজন। রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্য সহায়তা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক নীতি ও আইসিটি বিভাগের সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বলেন, করোনার কারণে গত বছর আমরা ভালোভাবে বাজেট পর্যালোচনা করতে পারিনি। এবারও তাই। আমরা যতোটা পারছি ভার্চুয়ালি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা বাজেটে আইটি সেক্টর, রফতানি বহুমুখীকরণসহ অন্যান্য কী কী ব্যাপারে আরও উন্নতি করা যায় তা নজর রাখবো।
এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. মাসুদ সাদিক বলেন, ভ্যাট আইন চালুর পর থেকে রেজিস্ট্রেশন ও ভ্যাট রিটার্ন বেড়েছে। বর্তমানে ভ্যাট রেজিস্টার্ড প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ লাখ ৫৩ হাজার। রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে ১ লাখ ৫৬ হাজার প্রতিষ্ঠানের এবং অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে ১ লাখ ৮ হাজার প্রতিষ্ঠানের। ভ্যাট প্রদানে অটোমেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সব প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে ভ্যাট প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে তিনি বলেন, ভ্যাটের আওতা বাড়াতে হবে, ফলে বর্তমানে যারা ভ্যাট দিচ্ছেন তাদের ওপর চাপ কমবে। ইতোমধ্যে ৩০০০ ইএফডি মেশিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থাপন করা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ হাজার ইএফডি মেশিন সংস্থাপন করা হবে।
আয়কর বিভাগের সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। এ প্রয়োজন মেটাতে রাজস্ব বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তবে এমন বাস্তবতায় করদাতাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার কর হার ক্রমান্বয়ে কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি সমাপনী বক্তব্যে বলেন, করোনা মহামারির কারণে সংবাদপত্র মারাত্মক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সংবাদপত্র শিল্প প্রায় ৩৭ শতাংশ কর দেয়। এর মধ্যে কর্পোরেট কর সাড়ে ৩২.৫ শতাংশ এবং নিউজ প্রিন্ট আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ। এ অবস্থায় নিউজ পেপারের আমদানি শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনার আহ্বান জানান তিনি।