নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল বলেছেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারি ও চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক ডলারের সংকট ও কাঁচামাল আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতাসহ নানা কারণে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে কিছুটা স্থবিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের নবনির্মিত শিপবিল্ডিং শেড এবং বিভিন্ন পূর্ত কাজের উদ্বোধন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় জাহাজ নির্মাণশিল্পে চলমান সংকট নিরসনে দিকনির্দেশনা দিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে নৌবাহিনীর প্রধান বলেন, প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী ব্যয় হ্রাস ও কর্মঘণ্টার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রশাসনিক ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের গতানুগতিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করে বাস্তবসম্মত এবং চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে স্থাপনা ও শ্রমিকের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের মূল লক্ষ্য শিপবিল্ডিংয়ের প্রতি গুরুত্ব বাড়াতে হবে। এছাড়াও গুণগতমান নিশ্চিতের জন্য প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি নতুন উদ্ভাবন হলে সেই উদ্ভাবনী ও উদ্ভাবককে স্বীকৃতি ও সম্মাননা দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, একসময়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত এই ডকইয়ার্ডটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অধীনে পরিচালিত হওয়ার পর থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আপনাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলেই এই অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আজকের এই শেড বৈরী আবহাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন কার্যক্রম গতিশীল করবে। এছাড়া গেস্টহাউসটি দেশ-বিদেশ থেকে আগত অতিথিদের মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করতে সক্ষম।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড নবনির্মিত শিপবিল্ডিং শেড-২ এবং বিভিন্ন পূর্ত কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নৌসদরের পিএসও রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আশরাফুল হক, রিয়ার অ্যাডমিরাল মঈনূল হক এবং নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর আব্দুলাহ আল-মাকসুস প্রমুখ।
নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, সদ্য নির্মিত এই শিপবিল্ডিং শেডটি স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ৩৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। শেডটির দৈর্ঘ্য ১২০.৫১ মিটার, প্রস্থ ৪৬.১৭ মিটার, উচ্চতা-৩০.৪৮ মিটার, ফ্লোর এরিয়া ৫৫০০ বর্গমিটারের এই শেডে প্রতি বর্গমিটারে ৫ মেট্রিক টন লোড বহন করার সক্ষমতা রয়েছে। নৌবাহিনীর নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের নির্মিত শেডটিতে সর্বোচ্চ ৪২ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া শেডটিতে ২টি ২৫ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ওভারহেড ক্রেন ও একটি আধুনিক সিএনসি মেশিন রয়েছে যা ইয়ার্ডের সক্ষমতাকে আরও একধাপ উন্নীত করেছে।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে বন্দরের সোনাকান্দা এলাকায় ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২২ একর এলাকাজুড়ে এই ইয়ার্ড দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও পুরাতন ডকইয়ার্ড। এই ডকইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের ক্ষেত্রে রয়েছে প্রায় শত বছরের প্রত্যক্ষ ও বাস্তব অভিজ্ঞতা। জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের পাশাপাশি সকল প্রকার স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং কাজসহ বিভিন্ন জাহাজের ইঞ্জিন ওভারহলিং এবং ভারী মেকানিক্যাল কাজে এই ডকইয়ার্ডের পূর্ণ সক্ষমতা রয়েছে।