করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত দেশে ১২৫ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২০৮ জন। মৃতদের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭৬ জন, প্রাথমিকের ৪৯ জন। রোববার (৮ আগস্ট) শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কতজন শিক্ষক-কর্মচারী আক্রান্ত ও মারা গেছেন তার তথ্য পাওয়া যায়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, জুলাই মাসে দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১৮ জন। মারা গেছেন ৭ জন। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৫১ জন, মৃত্যু হয়েছে ৭৬ জনের।
সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার তথ্য সংগ্রহ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন উইং। আর প্রাথমিক স্তরের তথ্য সংগ্রহ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। সেখান থেকেই আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
জুলাই মাসে মৃত্যু হওয়া সাতজন হলেন- ভোলার লালমোহন কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. গোলাম কিবরিয়া, বরিশালের উজিরপুর আলহাজ বি এন খান ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞানের প্রভাষক পান্না লাল সিংহ, একই উপজেলার হাজী তাহেল উদ্দিন ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. সাইফুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নামোশংকরবাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (বাংলা) মো. সাদেকুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ফজলুল হক, ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মো. আমজাদ হোসেন ও সিলেটের এমসি কলেজের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাবিবা আক্তার।
জানা গেছে, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ১ হাজার ৬৫১ জন মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১১৮ জন। আর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৫৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪৯ জন।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত জুই মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দুটোই বেড়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরেও এত সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী আক্রান্ত হওয়ার চিত্র উদ্বেগজনক। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের ৯টি আঞ্চলিক অফিস রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকা বিভাগে ৫১৩ জন। মারা গেছেন ২১ জন। কুমিল্লায় আক্রান্ত ১১৪ জন, মৃত্যু ৬ জনের। বরিশালে আক্রান্ত ২৪৬, মৃত্যু ৬; ময়মনসিংহে আক্রান্ত ১১৭, মৃত্যু ৭; চট্টগ্রামে আক্রান্ত ৮৫, মৃত্যু ৫; রাজশাহীতে আক্রান্ত ৯৬, মৃত্যু ৮; সিলেটে আক্রান্ত ১৩১, মৃত্যু ২; রংপুরে আক্রান্ত ১৩৯, মৃত্যু ৭ এবং খুলনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৭১ জন, মারা গেছেন ১৩ জন।
করোনায় মৃত্যুবরণকারীর মধ্যে ৮ জন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাও রয়েছেন। ওই কর্মকর্তারা হলেন- মাদারীপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর জীবন কৃষ্ণ সাহা, নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক চৌধুরী আশরাফুল আলম, রাজধানীর সরকারি বাংলা কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল খায়ের সামাদী, ভোলার লালমোহন কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. গোলাম কিবরিয়া, ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মো. আমজাদ হোসেন ও সিলেটের এমসি কলেজের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাবিবা আক্তার।
প্রাথমিকে আক্রান্ত ১৫৫৭
সারাদেশের প্রাথমিক স্কুলে কর্মরত মোট ১ হাজার ৫৫৭ শিক্ষক-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ১৬৩ জন সুস্থ হলেও ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে শিক্ষক ৪১, কর্মকর্তা ৫, কর্মচারী ২ জন ও একজন শিক্ষার্থী রয়েছেন। আর আক্রান্তের মধ্যে শিক্ষক ১ হাজার ২৩২, কর্মকর্তা ২০৫, কর্মচারী ৯০ ও ৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
জানা গেছে, মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৯, খুলনায় ১০, চট্টগ্রামে ১১, রাজশাহীতে ৬, বরিশালে ৬, সিলেটে ১ ও রংপুরে ৪ জন, ময়মনসিংহে ২ জন করোনায় মারা গেছেন।