হাতে কাজ না থাকায় মাছ বিক্রি করছেন কলকাতার এক অভিনেতা। তার নাম শ্রীকান্ত মান্না। দীর্ঘ ২৫ বছরের অভিনয় জীবন তার। ‘সংস্তব’ নাট্যদলে নিয়মিতই অভিনয় করেছেন এই সময়টায়। এছাড়াও বহু বাংলা সিনেমা, মেগাসিরিয়াল ও শর্ট ফিল্মেও দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। কিন্তু পেটের দায়ে আজ মঞ্চ, শুটিং ফ্লোরের অপেক্ষা ছেড়ে মাছ নিয়ে বাজারে বসছেন তিনি।
একসময় মিঠুন চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী, আবির চট্টোপাধ্যায়ের মতো বড় বড় অভিনেতার সঙ্গেও অভিনয় করেছেন শ্রীকান্ত। তার সংসার চলে অভিনয় থেকে উপার্জিত টাকাতেই। কিন্তু আজ পেটের দায়ে বেছে নিয়েছেন নতুন পেশা।
কলকাতার গণমাধ্যম নিউজ ফ্রন্টকে তিনি বলেন, “অভিনয় আমার মনের খিদে মেটায় আর মাছ বিক্রি আমার পেটের খিদে মেটাচ্ছে। দুটোই কাজ। রকমটা আলাদা শুধু। প্রথম প্রথম যখন বাজারে বসতাম মুখ ঢেকে রাখতাম ভালোভাবে, যাতে কেউ আমায় চিনতে না পারে। বাড়ি গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মেকআপহীন ‘আমি’কে দেখতাম। একদিন ভাবলাম, আজ যদি এরকম কোনো রোল আমাকে মঞ্চে বা অনস্ক্রিনে করতে হতো, তখন যদি এরকম আমার লজ্জা লাগত কিংবা ইতস্তত করতাম তা হলে তো চরিত্রটা থেকে পরিচালক আমায় বাদ দিয়ে দিতেন। বের করে দিতেন ফ্লোর থেকে।”
এই অভিনেতা বলেন, ‘সে দিনের পর থেকে আর আমি লজ্জা পাই না। মাছ বিক্রি করছি বলে আমার কোনো লজ্জা নেই। আফসোসও নেই। কারণ আমার পেটের জ্বালা মিটছে আজ এই পেশাতেই। যখন কাজকর্ম হারালাম আর চলছিল না সংসার তখন ঠিক করেছিলাম এমন একটা রাস্তা বের করব যেটাতে আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব। ২০২০ থেকে আজ অবধি যে দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা দিন কাটাচ্ছি তাতে অনেকেই পেশা বদলে অন্য চাকরি করছেন কেউ বা ব্যবসা করছেন।’
শ্রীকান্ত বলেন, ভোর ৫টা থেকে বেলা ১২টা কি বড়জোর দুপুর ১টা অবধি কাজ করার পর আমি ফ্রি। তখন আমি বাড়ি ফিরে গান শোনা, সিনেমা দেখা এগুলো করতে পারি।
অভিনয়ের সুবাদে অনেকে আপনাকে চেনে। তাদের মধ্যে কেউ দেখে চিনতে পারেনি? এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রীকান্ত বলেন, প্রথমে অবাক হয়েছেন। পরে উৎসাহ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমরাও ভালোভাবে বাঁচার জন্য অন্য আরও কোনো পথ খুঁজছি। পাড়া-প্রতিবেশী, অভিনেতা বন্ধুরা, সাংবাদিকরাও আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। অনেকেই বলছেন তাঁরা আমার জন্য গর্বিত। আর কী চাই?’
শ্রীকান্ত বলেন, ‘এসময়ে সকলেই কোনো না-কোনোভাবে সমস্যায় আছেন। হয়তো তা আমার থেকেও বেশি। তাই আমার কোনো আফসোস নেই আজ সকাল সকাল মাছ নিয়ে বাজারে বসছি বলে। কত ধরনের মানুষকে দেখছি, চিনছি। কত ধরনের অভিজ্ঞতা হচ্ছে আমার। এটাকেও একটা চরিত্র বলেই মেনে নিই আজকাল। বাজারটা আমার ফ্লোর বা মঞ্চ। সমৃদ্ধ হচ্ছি। সত্যিকারের ফ্লোরে বা মঞ্চে ফিরলে দর্শককে অনেক বেশি ন্যাচরাল অভিনয় উপহার দিতে পারব বলে আশাবাদী।’