করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার মতো ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ৭ থেকে ১০ দিন আগ পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও গত এক সপ্তাহে ভর্তি রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। রাজধানীর ডিএনসিসিসহ বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা গেছে এমন চিত্র। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষদিক থেকে রোগীর চাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। শ্বাসকষ্ট, খুশখুশে কাশি, জ্বর, শরীর ব্যথাসহ বিভিন্ন লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীর বেশিরভাগেরই করোনা শনাক্ত হচ্ছে। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেশে শনাক্ত হওয়ার পর থেকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যদিও নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত এখনো খুব একটা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন যেসব মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।
এতে মানুষ হাসপাতালে ছুটেছেন। গত কয়েকদিনে আক্রান্তের হারে ঊর্ধ্বগতি। সরজমিনে রাজধানীর মহাখালীর করোনা আক্রান্তদের জন্য বিশেষায়িত এক হাজার শয্যার হাসপাতালে দেখা যায় সেখানে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। জ্বর এবং শরীর ব্যথা নিয়ে টঙ্গীর তারগাছ এলাকা থেকে এসেছেন তাহমিনা খাতুন। বয়স ৬২ বছর। হাসপাতালে করোনা টেস্ট করার পর রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শে তাহমিনা খাতুনকে কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়েছে তার পরিবার। সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে দৈনিক গড়ে ৭ থেকে ১০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত ১০ দিন ধরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর আগে সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচজন রোগী ভর্তি হতেন। সূত্র জানায়, কোভিড-বিশেষায়িত এই হাসপাতালটিতে এক হাজার শয্যার বিপরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক এবং নার্স সংকট রয়েছে। নাম না বলার শর্তে হাসপাতালের ডিউটিরত এক চিকিৎসক বলেন, গত ১০ থেকে ১২ দিন ধরে হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
রোগীর সংখ্যা বাড়লে পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধিসহ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হাসপাতাল সূত্র জানায়, এখন প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জনের মতো রোগী আসছেন হাসপাতালে। গত মাসের শেষদিকে এ সংখ্যা ছিল অর্ধেকেরও কম। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, আমাদের হাসপাতালে এখন প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জন করে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত চার থেকে পাঁচদিন ধরে এ অবস্থা চলছে। এর আগ পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা পাঁচের মধ্যেই ছিল। করোনার নতুন ঢেউয়ে আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করতে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত কয়েকদিন করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও বেড়েছে। গড়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ জন রোগীর নমুনা শনাক্ত করা হচ্ছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানায়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত রোগীর চাপ খুব বেশি না হলেও প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৭ জন করে রোগী আসছেন। এছাড়া করোনা পরীক্ষা করতে আসা রোগীদের সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক বেড রয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমান বলেন, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও ভর্তির চাপ সেভাবে বাড়েনি। যদিও হাসপাতালটিতে টেস্টের হার বেড়েছে। পরীক্ষা করালে পজেটিভের হার বেশি পাওয়া যাচ্ছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে ১০ জনের মতো রোগী আসছেন। ভর্তি হচ্ছেন গড়ে দুই থেকে তিনজন। করোনার নতুন ঢেউয়ে আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিতে হাসপাতালটির শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি।
জমায়েত বন্ধের সুপারিশ জাতীয় কমিটির: করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জমায়েত বন্ধের সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের নেয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে কমিটির ৫০তম সভায়। শুক্রবার রাতে কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাশের দেশ ভারতসহ সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বাংলাদেশেও সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতীয় কমিটি। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের নেয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নে জোর দিয়ে সেখানে বলা হয়, প্রয়োজনে কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আইনি ব্যবস্থা, যেমন মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। এ ছাড়া শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা, হাত পরিষ্কার রাখা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে সকল সামাজিক (বিয়ের অনুষ্ঠান, মেলা), ধর্মীয় (ওয়াজ মাহফিল) ও রাজনৈতিক সমাবেশ এই সময় বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া সভা বা কর্মশালার ব্যবস্থা অনলাইনে করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীসহ সকলকে দ্রুত টিকার আওতায় আনার তাগিদ দিয়েছে জাতীয় কমিটি।