করোনার বছরেও ২০২০ সালে বিশ্বের শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স আহরণে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এবছর বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২২ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্রিফ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে গড়ে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি এসেছে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স।
স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭ থেকে ৮ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য প্রবাসে যান। কিন্তু করোনার প্রকোপ শুরুর পর ২০২০ সালে এ সংখ্যা মাত্র ২ লাখ ১৮ হাজারে নেমে আসে। এ সময় প্রায় ৬৭ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিক মজুরি ছাড়াই দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ফিরে আসা শ্রমিকদের মধ্যে ৬২ শতাংশ তাদের সঞ্চয় ও স্থাবর সম্পদ সেসব দেশে ছেড়ে দেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত ১৮৬টি দেশে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমকি করোনায় আক্রান্ত হয়। ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ২ হাজার ৩৩০ জন বাংলাদেশি বিশ্বের ২১টি দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২০ সালের হিসাবে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে রেমিট্যান্স বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ, দক্ষিণ এশিয়ায় বেড়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় বেড়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে রেমিট্যান্স কমেছে পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোতে গড়ে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ায় কমেছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোতে কমেছে সাড়ে ১২ শতাংশ। সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে নাইজেরিয়ার ২৮ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ২০২০ সালে বিশ্বের নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে ৫৪০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স গিয়েছে। ২০১৯ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহের পরিমাণ ছিল ৫৪৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাত্ এক বছরের ব্যবধানে এসব দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। করোনার প্রকোপ শুরুর পর রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার যে আশঙ্কা করা হয়েছিল তার থেকেও কম ধাক্কা এসেছে এই খাতে। মূলত রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশগুলোতে বড় আকারের প্রণোদনা বাস্তবায়নের ফলে এ ধাক্কা কম লেগেছে। বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ শুরুর পর রেমিট্যান্স প্রেরণে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার প্রভাবে ইতিবাচক ফল মিলেছে। তাছাড়া গত বছরের মাঝামাঝি দেশে বড় আকারের বন্যার প্রভাবে প্রবাসীরা বেশিহারে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
প্রতিবেদনের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সোশ্যাল প্রটেকশন অ্যান্ড জবস গ্লোবাল প্র্যাকটিসের গ্লোবাল ডিরেক্টর মিশাল রটকোভস্কি উল্লেখ করেছেন, বিশ্ব জুড়ে কোভিড-১৯ দরিদ্র পরিবারগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এরপরেও রেমিট্যান্স দরিদ্র বহু পরিবারকে টিকে থাকতে সহায়তা করেছে। প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য সহায়ক নীতি সহায়তা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মতো উদ্যোগ গ্রহণ অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক আশা করছে, এ বছরের মাঝামাঝি বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে। ফলে এ বছর শেষ নাগাদ সারা বিশ্বে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৫৫৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে। পরের বছর আরো ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে বিশ্বে রেমিট্যান্স প্রবাহের পরিমাণ ৫৬৫ ডলারে উন্নীত হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে।