কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের দেখলেই হত্যা ও মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। কমিউনিজম নির্মূল নিয়ে এক বৈঠকে গতকাল শুক্রবার সেনাবাহিনী ও পুলিশকে এমন নির্দেশ দেন তিনি। খবর আল-জাজিরার। কমিউনিজম নির্মূল বিষয়ক ওই বৈঠকে দুতার্তে বলেন, ‘সেনাবাহিনী ও পুলিশকে আমি বলে দিয়েছে যে, সশস্ত্র কমিউনিস্ট বিদ্রোহী দেখলেই তাদের হত্যা করতে হবে। মারা গেছে কিনা তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আঘাত করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হত্যার পর মরদেহ তাদের প্রত্যেকের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মানবাধিকারের কথা ভুলে যান। এটাই আমার আদেশ। এর জন্য আমি কারাগারে যেতেও রাজি রয়েছি, এটা আমার জন্য কোনো সমস্যা নয়। কমিউনিস্টদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়ে আমার মনে কোনো দ্বিধা নেই।’
কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের প্রতি সরাসরি ইঙ্গিত করে দুতার্তে আরও বলেন, ‘তোমরা সবাই ডাকাত। তোমাদের কোনো মতাদর্শ নেই। এমনকি চীন ও রাশিয়াও এখন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’ একই সময়ে তিনি কমিউনিস্টরা অস্ত্র ফেলে দিলে তাদের চাকরি, বাসস্থান ও জীবনমান উন্নয়নের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে আরও বলেন, ‘তোমরা ৫৩ বছর ধরে লড়াই করছো। এখন আমার নাতি-নাতনি আছে। এখনো তোমরা লড়াই করছো। আমি বুঝতে পারি না তোমরা কেন লড়াই করছো।’ দুতার্তের এমন নির্দেশের পর দেশটিতে মাদকবিরোধী অভিযানের সময়ের মতো সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কয়েক দশকের কমিউনিস্ট বিদ্রোহ
১৯৬৮ সাল থেকে ফিলিপাইনের সরকারের সঙ্গে মাওবাদী কমিউনিস্ট বিদ্রোহীরা লড়াই করে আসছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ফিলিপাইনে মাওবাদী বিদ্রোহ চলছে। দেশটির সেনাবাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের কারণে বিগত ৫৩ বছরে ফিলিপাইনে ৩০ সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।
ফিলিপাইনে কয়েক দশক ধরে চলে আসা এ কমিউনিস্ট বিদ্রোহের অবসানে শান্তিচুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েও দেশটির কয়েকজন প্রেসিডেন্ট ব্যর্থ হয়েছেন। জোস মারিয়া সিসোনের নের্তৃত্বে দেশটিতে কমিউনিস্টদের এই সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে। উল্লেখ্য, জোস মারিয়া সিসোন বর্তমানে নেদারল্যান্ডসে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে রয়েছেন।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে দুতার্তে বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা বিশেষ করে বিদ্রোহী কমান্ডারদের সঙ্গে মিত্রতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। সে সময়ে তিনি দেশটির মিনদানাও অঙ্গরাজ্যের দাভাও শহরের নগরপিতা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। শহরটিতে এখন পর্যন্ত কমিউনিস্ট বিদ্রোহ অব্যাহত রয়েছে।
ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সশস্ত্র লড়াইয়ে যুক্ত বিদ্রোহীদের সন্ধানের উদ্দেশ্যে দুতার্তে কমিউনিস্টদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার নির্দেশ দেন। এরপর ২০১৭ সালে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী কমিউনিস্টদের সহিংসতার পর তিনি শান্তি আলোচনা বন্ধ করেন এবং কমিউনিস্টদের ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষণা করে এক প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন।
কয়েক দিন আগে দুতার্তে কমিউনিস্ট বিদ্রোহী দমনে বিতর্কিত নির্দেশ দিয়ে সমালোচিত হন। বিদ্রোহীদের মাথার মূল্য ঘোষণা করে কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের হত্যার জন্য মাথাপিছু পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দুতার্তে। এছাড়া নারী কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের যৌনাঙ্গে গুলি করার নির্দেশ দিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি।