অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্পণ্যতা থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, সংবিধান মেনে চলতে হবে। কথায় কথায় সংবিধান পরিবর্তনের কথা মেনে নেওয়া হবে না। আমাদের অনেক কষ্ট ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে এ সংবিধান তৈরি করা হয়েছে।
শনিবার (১২ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, সংবিধানকে সমুন্নত রেখে ও সাংবিধানিক ধারা বজায় রেখে এ দেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা হবে। এমন কি নির্বাচনকালীন সরকারে যদি কেউ আসতে চায়, সংবিধানে না থাকলেও আমরা টেকনোক্রেট মন্ত্রী হিসেবে শতকরা যতজন পায় আমরা তা দিতে পারি।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য যখন আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে তখন বিএনপির নেতৃত্ব বেগম খালেদা জিয়া উত্তর দেয়— এই দেশে পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। আজকে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করতে হয়, তারা কোন কোন পাগল আর শিশু ঠিক করেছেন এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার জন্য। আমাদের আন্দোলনে বাধ্য হয়ে বিএনপি নিজের মতো করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন করল। সেই নির্বাচনে বিএনপি দেখল জনগণ আর তাদের সঙ্গে নেই। তখন থেকেই তারা সিদ্ধান্ত নিলেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আর নির্বাচন করে লাভ নেই। তখন থেকে তারা নির্বাচন বয়কটের প্রক্রিয়া শুরু করলেন। এখন সেই বয়কট নিয়েই তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বলেন, তাদের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা হলো। আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হলো। কিন্তু তার কোনো বিচার হলো না। এমনকি সংসদেও এ বিষয় কোনো আলোচনা করতে দেওয়া হলো না। আজকে তারাই গণতন্ত্রের কথা বলে। জিয়াউর রহমান তার হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে এ দেশে প্রথম ভোট ব্যবস্থা বিধ্বস্ত করে। এরশাদ সাহেবের আমলেও একই অবস্থা হয়েছে। নির্বাচন শেষ হওয়ার ১২ দিন পরে ফল ঘোষণা হয়। এই যাদের চরিত্র তারা আজকে গণতন্ত্রের কথা বলে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলে। তারা নিজেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে না। আর বলে আওয়ামী লীগ তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছে।
১৪ দলের এই সমন্বয়ক বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মনে হয়েছিল শুধু ওই পরিবারকে হত্যা করা হয়েছিল বাকি সব ঠিক আছে। কিন্তু আড়াই মাসের মাথায় কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলো। তখন মানুষ বুঝতে পারল এ হত্যাকাণ্ড কোনো দল বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়। এটি প্রতিহিংসামূলক স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানকে ভেঙে যারা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল তাদের প্রতি ৭১ এর পরাজিত শক্তির প্রতিবিপ্লব সংগঠিত হয়। এই খুনিদের নির্বিচারে বিদেশে যেতে দেওয়া ও পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ পাস করিয়ে তাদের বিচার করার আওতা থেকে বাইরে রাখা হলো। যারা এই হত্যাকারীদের সহায়তা করল তারা যদি এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকবে তবে কেন এই সহযোগিতা করল। পরে তারা যখন দল গঠন করলেন তখন যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছেন তাদেরকে দলে নিলেন। সেদিন থেকেই কিন্তু এদেশে রাজনীতি পাল্টে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছেন।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, গণ আজাদী লীগ নেতা এসকে সিকদার প্রমুখ।