করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর সীমিত পরিসরে দুর্গাপূজা হলেও এবার ফিরছে স্বাভাবিক রূপে। সারাদেশে এবার ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে। সব জায়গায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা জানিয়েছেন।
পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক বলেন, বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার ঘণ্টা বাজবে ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে। ১ অক্টোবর শুরু হবে মূল পূজা যা ৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
তিনি বলেন, গত বছরের ঘটনার প্রেক্ষাপটে এ বছর সরকার চাচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই যেন কোনো অঘটন না ঘটে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গত বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি সক্রিয়। আমরা মনে করি, আমাদের ৩২ হাজার ১৬৮টি মন্দিরের সুরক্ষা দেওয়া খুব কঠিন। তাই আমরা এ বছর প্রত্যেক মন্দিরে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করছি, যারা রাতেও পাহারা দেবে।
জে এল ভৌমিক আরও বলেন, আমরা সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ, এ কথা বলা যাবে না। ঘটনা ঘটতে পারে, তবে আমরা এবার খুব সচেতন। গ্রামে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সেই মন্দিরগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ যেগুলো অস্থায়ী। স্থায়ী জায়গায় না হয়ে মাঠে, ময়দানে বা বিভিন্ন রাস্তাঘাটে যেসব মণ্ডপ স্থাপন করা হয়, সেগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে আমাদের বেশি বেশি পাহারা দিতে হবে এবং সারারাত বসে থাকতে হবে।
জে এল ভৌমিক আগামী নির্বাচনের আগেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বার বার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হচ্ছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের কথা বলা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগেই এটা করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার উপস্থিত ছিলেন।
তিনি জানান, গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টিতে। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪১টি, যা গত বছরের থেকে ৬টি বেশি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসার পর প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে পূজার সংখ্যা বাড়ছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শুভানুধ্যায়ীদের অনুদান নিঃসন্দেহে পূজার সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি নিশ্চয়ই আনন্দদায়ক। তবে পূজার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পূজাকেন্দ্রিক নিরাপত্তার বিষয়টিও সবাইকে বিবেচনায় নেওয়া দরকার।
দুর্গাপূজার প্রাক্কালে বিভিন্ন সাংগঠনিক পর্যায়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভা এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভার মতামতের ভিত্তিতে সভা থেকে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয়।
এর মধ্যে রয়েছে দুর্গাপূজায় ২ (দুই) দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা, জাতীয় মর্যাদায় পালনের পদক্ষেপ নেওয়া, পূজার দিনে কারাগার, হাসপাতাল, অনাথ আশ্রমে উন্নত খাবার পরিবেশন করা ইত্যাদি।