ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন বিএনপির রাজনৈতিক ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাদের মুখচ্ছবিকে মুখোশ দিয়ে ঢাকতে চাইছে। শনিবার (০৬ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভার শুরুতে তিনি একথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ মার্চ মাসে বিএনপির কর্মসূচির উদ্বোধন করে আদালতের রায়ে দণ্ডিত পলাতক একজন আসামি। যা এদেশের জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে দিয়ে মহান স্বাধীনতার মাসে কর্মসূচির উদ্বোধন করে বিএনপি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে তামাশা করেছে। যার মাধ্যমে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বাঙালির আত্মপরিচয় বিনিমার্ণের ইতিহাসের সঙ্গে।
তেমনি আজ একদিকে হঠাৎ করে ৪৬ বছর পর তাদের বোধোদয় হয়েছে, যে ৭ মার্চকে তারা নিষিদ্ধ করেছিল। ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ তারা শুধু নিষিদ্ধই করেনি, এ ভাষণ যারা বাজাত তাদেরকে নির্যাতন করত, জেলে দিত এবং অনেককে অত্যাচার নির্যাতন করে পঙ্গু পর্যন্ত করে দিয়েছিল। সেই ৭ মার্চ তারা পালন করছে। মুখচ্ছবিকে আজকে মুখোশ দিয়ে ঢাকতে চাইছে। ৭ মার্চ পালন করছে, আবার আরেকদিকে বলছে, একটি ভাষণ স্বাধীনতা এনে দেয়। আসলে এই কথাটি বলার জন্যই তারা ৭ মার্চের আলোচনা করছে। এটা তাদের আরেকটি রাজনৈতিক ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই না, বলেন তিনি।
রাজশাহীর বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির এক নেতার আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের কাছে এটা বোধগম্য নয়, এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ওই নেতার ব্যক্তিগত নাকি বিএনপির দলীয়। গত চার-পাঁচ দিনে বিএনপির ওই নেতার বক্তব্য নিয়ে এখন পর্যন্ত দলটি অফিসিয়াল কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে প্রমাণ করেছে, এটি তাদের দলগত অবস্থান। গত ২ মার্চ রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির মহাসমাবেশে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘আজ রাত, কাল আর সকাল নাও হতে পারে। ৭৫ মনে নাই?’
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বলব তিনি কী জবাব দেবেন? রাজশাহীতে তার দলের নেতা প্রকাশ্যে যে বক্তব্য রেখেছেন, আরেকটা ১৫ আগস্ট ঘটানোর, এরকম মানসিকতা এরকম চরিত্র নিয়েই কী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করবেন, সুবর্ণজয়ন্তী পালনের মুহূর্তে এই ধরনের বক্তব্য দেওয়ার সাহস আপনার দলের নেতা কি করে পেল? এটা আপনাদের দলীয় বক্তব্য কি না? আপনার কাছে জানতে চাই?
তিনি বলেন, আজকে বিএনপি চক্রান্তের পথই বেছে নিয়েছে। কারণ তারা নির্বাচন করতে গেলে জনগণ তাদের ভোট দেয় না। জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আন্দোলন করতে গেলে জনগণ সাড়া দেয় না। তারা বারবার চেষ্টা করেছে, হাঁকডাক দিয়েছে কিন্তু জনগণ তাদের আন্দোলনে সাড়া দেয় না। কারণ বিএনপির আন্দোলন মানেই হচ্ছে সহিংসতা, বিএনপির আন্দোলন মানেই হচ্ছে জ্বালাও-পোড়াও, তাদের আন্দোলনের মানেই হচ্ছে আগুন সন্ত্রাস। এই তিক্ত অভিজ্ঞতা দেশের মানুষের জানা আছে।
বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির কারণে তাদের ভোট কমে যাচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সে কারণেই আজকে তাদের ভোটে ভরাডুবি। এটা সরকারেরও দোষ না, ভোট কম পড়ে নির্বাচন কমিশনেরও দোষ না। জনগণের কাটগড়ায় পরিত্যক্ত জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি আন্দোলনে যেমনিভাবে ব্যর্থ, তেমনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও জনগণের আস্থা অর্জনেও তারা ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগেই বলেছি, বিএনপি ভোটের মাঠে সাড়া পাচ্ছে না। পৌরসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে তারা বুঝতে পেরেছে, তাদের ভোট নেই। সেটা তারা বুঝতে পেরেছে। সে কারণেই তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। তারা নিজেদের রাজনৈতিক ব্যর্থতার দায় নির্বাচন কমিশন, সরকার এবং জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে আসুন, আজকে দেশরত্ম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন সমৃদ্ধি শান্তির পক্ষে অগ্রসরমান অভিযাত্রায় শামিল হই। রাজনীতিকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনি, গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে আনি। মুজিববর্ষ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচিও ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে যৌথসভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা।