বাড়ির টিনের বেড়ায় অটোরিকশা লাগায় প্রতিবেশী গ্যারেজ মালিকের স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী-মেয়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মামলা হলে জামিন নেন প্রভাবশালী রফিকুল ও তার পরিবার। এবার মামলা প্রত্যাহার করে নিতে নির্যাতিতার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন তারা।
নির্যাতনের এ ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বীরচরণ এলাকায়। ইতোমধ্যে সেই নির্যাতনের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে।
এ ঘটনায় নির্যাতিত গৃহবধূ গত ৫ ফেব্রুয়ারি মেট্রোপলিটন পুলিশের হারাগাছ থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলায় আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আসার পর নির্যাতিত নারীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবারটি।
মামলা সূত্রে জানা যায়, এ বছরের ৩১ জানুয়ারি সকালে গ্যারেজ থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বের করার সময় পাশের বাড়ির রফিকুল ইসলামের টিনের বেড়ায় লাগলে রফিকুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে গ্যারেজ মালিককে উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এ সময় রফিকুলের গালিগালাজ শুনে কথা বলতে গ্যারেজ মালিকের স্ত্রী লাইলী বেগম বাড়ি থেকে বের হয়ে আসনে। লাইলী বেগমকে একা পেয়ে রফিকুল ইসলাম ও স্ত্রী, মেয়ে মিলে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি দিতে থাকেন। বাঁচার জন্য চিৎকার করলে এলাকার লোকজন আসেন। কিন্তু রফিকুলের ভয়ে লাইলীকে রক্ষা করতে কেউই এগিয়ে আসেনি।
এলাকার লোকজনকে ডেকে নিয়ে আসার অপরাধে রফিকুল ইসলাম আরও ক্ষিপ্ত হয়ে লাইলীর চুলে মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে বাড়ির সামনে নিয়ে গিয়ে স্ত্রী-মেয়ে মিলে আবারও মারধর শুরু করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। এতে লাইলী বেগম অসুস্থ্ হয়ে পড়লে তাকে ফেলে তারা চলে যান। পরে এলাকাবাসী লাইলী বেগমের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পারভীন বেগম বলেন, একটা রিকশা বের করার সময় রফিকুলের টিনের বেড়ায় লেগেছে। সে জন্য রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী, মেয়ে ও মেয়ের জামাই মিলে অনেক মারধর করে। রফিকুলের ভয়ে লাইলীকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। আমরা এর বিচার চাই।
নির্যাতনের শিকার লাইলী বেগম বলেন, আমাদের রিকশা গ্যারেজ থেকে বের করার সময় রফিকুলের টিনের বেড়ায় লাগে। এ জন্য রফিকুল তার বউ মেয়ে ও মেয়ের জামাই মিলে আমার চুল ধরে মাটিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে কিল-ঘুষি মেরে কাপড় ছিঁড়ে আমার শ্লীলতাহানি করে। বিচারের জন্য থানায় মামলা করায়, আমরা এখন আর কেউ বাড়িতে থাকতে পারছি না। রফিকুল মামলা তুলে নিতে তার গুন্ডা বাহিনী ও নিজে প্রতিনিয়ত আমাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আমাকে যারা নির্যাতন করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
ভাইরাল ভিডিওর বিষয়ে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বলেন, মারামারি লাগলে এ রকম হয়, উভয়ের মধ্যেই মারামারি হইছে। সাক্ষাতে বাকি কথা বলব ভাই বলে ফোন কেটে দেন তিনি।
হারাগাছ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, এ মামলার জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেটের আবেদন করেছি। সার্টিফিকেট পেলেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে। বর্তমানে আসামিরা জামিনে আছেন।