ত্রিদেশীয় শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে ইরানে সফর করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করার পর এই প্রথম সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশের বাইরে কোনো দেশ সফর করছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। একই দিনে ইরানে যান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও।
পুতিনের এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পশ্চিমা দেশগুলো এখন রাশিয়ার অর্থনীতিকে অচল করে দেওয়ার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই অবস্থায় পুতিন চীন, ইরান এবং ভারতের আরো কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছেন। মাত্র তিন দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি আরব সফর করেছেন। তার পরই পুতিন তেহরান গেলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনির সঙ্গে তার পঞ্চম বৈঠক করার জন্য। এরদোয়ান ও রাইসির সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেন ও সিরিয়া নিয়ে আলোচনা করার কথা পুতিনের। আবার রাইসি ও পুতিনের আলোচনায় পরমাণু চুক্তি গুরুত্ব পাবে।
ইরান সফরের মধ্য দিয়ে পুতিন একটি বার্তা পাঠাতে চাইছেন। তা হলো, আমেরিকার শত্রু দেশ ইরানের সঙ্গে রাশিয়া এখন সম্পর্ক আরো ভালো করতে চাইছে। সফরের আগে পুতিনের মুখপাত্র পেসকভ বলেছেন, রাশিয়া ও ইরান দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। তেহরানের কাছেও রাশিয়ার সমর্থন জরুরি। কারণ, আমেরিকা, ইসরাইল ও একাধিক আরব দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো নয়। ইরানের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মস্কো হলো সুপারপাওয়ার। আমাদের এ রকমই শক্তিশালী বন্ধু দেশ চাই।
পুতিনের পররাষ্ট্রনীতি-সংক্রান্ত পরামর্শদাতা ইউরি উসাকভ মস্কোতে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতৈক্য গড়ে তোলাই পুতিনের সফরের উদ্দেশ্য। অধিকাংশ বিষয়েই দুই নেতার অবস্থান এক বা প্রায় এক। উশাকভ জানিয়েছেন, ‘মঙ্গলবারই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন পুতিন। এরপর একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে এবং বিবৃতির খসড়া এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।’ তুরস্কের কর্মকর্তারা বলেন, খাদ্যশস্য, সিরিয়া ও ইউক্রেনসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ইস্যুতে তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিদেশ সফর সীমিত করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। তবে গত জুনে তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানে সফর করেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে নতুন করে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন। তবে রাশিয়া ও ইরান সিরিয়ায় তুর্কি আগ্রাসনের বিরোধী এবং আসন্ন ত্রিদেশীয় শীর্ষ সম্মেলনে এ বিষয়ে এরদোয়ানকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন পুতিন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। ইরান এরই মধ্যে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, সিরিয়ায় তুরস্কের যে কোনো আগ্রাসন পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আশ্রয় নিয়েছে বল অভিযোগ তুলে সেখানে ২০১৬ সাল থেকে বেশ কয়েক বার সামরিক অভিযান চালিয়েছে তুরস্ক।