ইউরোপের ছয় দেশকে অনুসরণ করে এবার অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা ব্যবহারে স্থগিতাদেশ দিয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি ও স্পেন।টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে টিকা গ্রহীতাদের শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার কয়েকটি ঘটনা সামনে আসায় এর আগে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ব্যবহার স্থগিত করেছিল আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, বুলগেরিয়া, আইসল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস— এই ছয়টি ইউরোপীয় দেশ।
নরওয়ে ও ডেনমার্কে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়া প্রায় ৪০ জনের শরীরে রক্ত জমাটের খবরের পর এই টিকার সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওষুধ বিষয়ক প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) সম্প্রতি বিষয়টি তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোমবার জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইতালির ওষুধ কর্তৃপক্ষ, স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দফতর থেকে দেওয়া বিবৃতিগুলোতে বলা হয়েছে, ইএমএ তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই এ ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে দেশগুলো।
এদিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনা টিকার প্রস্তুতকারী দল অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের অন্যতম গবেষক প্রফেসর অ্যান্ড্রু পোলার্ড সোমবার টিকা গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘এই টিকার অধিকাংশ ডোজ ব্যবহার করা হয়েছে যুক্তরাজ্যে। সেখানে টিকা নেওয়ার পর কারো রক্ত জমাট বাঁধার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।’
তার এই বক্তব্য সমর্থন করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও। অক্সফোর্ডের টিকার নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি সোমবার বলেন, ‘এমএইচআরএ (মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি) এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বিশ্বের সবেচেয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর একটি।’
‘এ পর্যন্ত যে টিকাগুলো তার ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে, সেগুলোর কোনোটির মধ্যে সমস্যা পাওয়া গেছে – এমন ঘটেনি। গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে শুরু হয়েছে গণটিকাদান কর্মসূচি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন প্রায় ৫০ লাখ মানুষ।
ইউরোপের দেশগুলোর চাপে যদিও বিষয়টি তদন্তে সম্মত হয়েছে ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি, কিন্তু সোমবার এক বিবৃতিতে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে ইএমএ। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘টিকা নেওয়ার পর রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার যে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, খুব অল্পসংখ্যক টিকা গ্রহীতার ক্ষেত্রেই এমন ঘটেছে।’
‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাসপাতালগুলোতে প্রতিবছর কয়েক হাজার ব্যক্তি রক্ত জমাট বাঁধা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন। সম্প্রতি এই টিকা গ্রহণকারী যে কয়জন ব্যক্তি এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন, সেই সংখ্যা মোট টিকা গ্রহণকারীদের তুলনায় নিতান্তই অল্প।’