বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন বা বিএফডিসি হলো দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রধান কেন্দ্র। যুগ যুগ ধরে এই স্থানটিকে ঘিরে প্রসারিত হয়েছে ঢাকার রূপালি জগত। এফডিসি মানেই তারকাদের আনাগোনা, সিনেমার শুটিং। এটি রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি কেপিআইভূক্ত এলাকা। অর্থাৎ এখানে সংশ্লিষ্ট মানুষ ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারে না।
কিন্তু সম্প্রতি এফডিসিতে বহিরাগত মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। বিকেল থেকে রাত অব্দি শত শত বহিরাগত অবলীলায় প্রবেশ করছে, এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা নিয়ে অনিরাপত্তায় ভুগছেন তারকারা।
আগামী ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। এ উপলক্ষে এফডিসিতে এখন তারকাদের হাঁট বসেছে। প্রতিদিনই একঝাঁক তারকার আনাগোনা থাকছে সিনেমার আঁতুড়ঘরে। তারা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছেন, প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যে অজ্ঞাত, বহিরাগত মানুষের ভিড় দেখে আতঙ্ক অনুভব করছেন তারকারা। কোনো দুর্ঘটনা, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।
বিষয়টি নিয়ে আসন্ন নির্বাচনের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জায়েদ খান বলেন, ‘শিল্পীদের নির্বাচনে শিল্পীরা আসবে। এছাড়া এফডিসি সংশ্লিষ্টরা কাজের জন্য এখানে আসবেন। কিন্তু আসছে শত শত বহিরাগত মানুষ। এতে আমরা শিল্পীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। শনিবার আমাদের দুই সিনিয়র শিল্পী সূচরিতা ও অঞ্জনা আপা এফডিসিতে আসতে গিয়ে বরিহগতদের ভিড় শুনে রাস্তা থেকেই গাড়ি ঘুড়িয়ে চলে গেছেন। আর আমরা শিল্পীরা তো ঠিকমতো এফডিসিতে হাঁটতেই পারছি না।’
এ বিষয়ে শিল্পী সমিতির নির্বাচন কমিশনের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান জায়েদ খান।
অন্যদিকে কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল থেকে সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন করছেন নায়ক সাইমন সাদিক। তিনি বলেন, ‘এফডিসিতে প্রচুর বাইরের লোক প্রবেশ করছে। এতে আমাদের শিল্পীদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। ভোটের প্রচারণার চেয়ে সেলফিতে বেশি সময় দিতে হয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা এফডিসির এমডি মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলাম। তাকে বিষয়টি অবগত করার পর তিনি জানান, এফডিসিতে কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে বিধায় মূল গেইট খোলা রাখতে হচ্ছে। এ কারণেই বহিরাগতর প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।’
আসন্ন নির্বাচনের প্রধান কমিশনার পীরজাদা শহিদুল হারুণ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা এফডিসির এমডি বরাবর চিঠি দিয়েছি। যারা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নন, তাদের প্রবেশ ও যাতায়াতে যেন নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। কারণ ওমিক্রন সংক্রমণ বেড়েছে। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
এফডিসিতে বহিরাগতের প্রবেশ ইস্যুতে সামনে আসছে ২০১৭ সালের একটি ঘটনাও। ওই বছর শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সুপারস্টার শাকিব খানের ওপর চড়াও হয়েছিল অজ্ঞাত কিছু যুবক। দেশের শীর্ষ নায়ককে লাঞ্ছনার সেই ঘটনাকে বহিরাগতদের কাজ বলে দাবি করেছিলেন কেউ কেউ। ওই নির্বাচনে শাকিব সমর্থন দিয়েছিলেন ওমর সানীর প্যানেলকে। কিন্তু জয়লাভ করে মিশা-জায়েদের প্যানেল। তাই শাকিবের ওপর হামলার ঘটনাকে ভিন্ন চোখেও দেখেছেন অনেকে।
এতো বড় একটি ঘটনার পরও এফডিসিতে বহিরাগতদের আনাগোনা অব্যাহত রয়েছে। যার কারণে সিনেমা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাই নির্বাচনের আগেই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছেন শিল্পীরা।