চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম ২৭ দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে ২১ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। সবশেষ গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল ওহাব তরফদার। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি যশোরের একতা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন।
এ নিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে ১৫২ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হলো। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) জানিয়েছে, আবদুল ওহাব তরফদার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
আবদুল ওহাব তরফদারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে। বিএমএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ এপ্রিল দেশে করোনায় প্রথম চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছিল।
জুনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন ৪৫ জন চিকিৎসক। সেপ্টেম্বরের পর থেকে চিকিৎসকদের মৃত্যুর হার অবশ্য কিছুটা কমে। তবে চলতি বছরের এপ্রিলে আবার তা বেড়ে যায়। বিএমএর তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান চারজন চিকিৎসক। ফেব্রুয়ারিতে মারা যান একজন। মার্চে মারা যান তিনজন।
চিকিৎসকদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বাড়ার মূল কারণ হাসপাতালে রোগীর চাপ ও করোনার সক্রিয় ধরন বলে মনে করেন বিএমএ মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোতে যত বেশি রোগীর চাপ বাড়ছে, তত বেশি চিকিৎসক আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের ধরনগুলো বর্তমানে এত বেশি সক্রিয় যে তা খুব দ্রুত ফুসফুসকে সংক্রমিত করছে। এতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিকিৎসকদের মৃত্যুও বাড়ছে।
ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, চিকিৎসকেরা ১৫ মাস ধরে একটা মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত আছেন। চলমান এই চাপে রোগী সামাল দেওয়াটাও তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসকদের আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন বিএমএ মহাসচিব। বিএমএর তথ্য বলছে, গত বছরের মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে ২ হাজার ৯১১ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। একই সময়ে ২ হাজার নার্স ও ৩ হাজার ২৯৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।